কমলগঞ্জে বর্ষবরণের দিন স্বস্ত্রীক স্কুলশিক্ষকের ওপর রং ছিটানোর ঘটনা প্রতিবাদী শিক্ষককে চেইন দিয়ে বেধড়ক পেটালো বখাটে শিক্ষার্থী
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : পহেলা বৈশাখ নববর্ষের দিন স্বস্ত্রীক শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর কয়েক শিক্ষার্থী একই এলাকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকের ওপর রং ছিটিয়েছে। রং ছিটানোর প্রতিবাদ করায় উল্টো বখাটে শিক্ষার্থীরা প্রতারণা করে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে সাইকেলের চেইন দিয়ে বেধড়কভাবে শিক্ষককে পিটিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার দুপুর ১২টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছিত সড়কে।
কমলগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অংশ হিসেবে শমশেরনগর এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এহসানুল হক মাহিনের নেতৃত্বে কতিপয় বখাটে শিক্ষার্থী রাস্তায় নিজেদের মধ্যে এমনকি রাস্তার লোকজনের উপর রং ছিটায়। দুপুর ১২ টায় শমশেরনগর হাজী মোহাম্মদ উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবিএম মাসুদুর রহমান তার ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাদাইরদেউল গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। মাহিনের নেতৃত্বে ছাত্ররা শিক্ষক মাসুদুর রহমানের ওপর রং ছিটিয়ে দেয়। এ সময় ওই শিক্ষক এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বখাটে শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে মারমুখী আচরণ করে। শিক্ষক তখন বখাটে শিক্ষার্থী মাহিনকে ধাক্কা দিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর মাহিন নিজেকে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জনৈক ছাত্রীর অভিভাবক পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে শমশেরনগর ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। শিক্ষক প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার পর পরই মাহিনের নেতৃত্বে বখাটে শিক্ষার্থীরা হাতে থাকা সাইকেলেরে চেইন দিয়ে শিক্ষক মাসুদকে বেধড়কভাবে পেটায়। এ ঘটনায় রোববার রাতেই শিক্ষক বাদী হয়ে মাহিনকে প্রধান আসামী করে ৩জনের নাম উল্লেখপূর্বক থানায় মামলা করেন।
নির্যাতিত শিক্ষক এবিএম মাসুদুর রহমান মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিনিধিকে জানান, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় তার রিক্সার সামনে ওই বখাটে ছেলেরা রং ছুঁড়ে মারে। তিনি একজন শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার পর বখাটেরা আজকে কি দিন এবং আজকে ছাত্র শিক্ষক কোন ভেদাভেদ নেই তাই রং দিয়েছে বলে জানায়। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে বখাটেদের ধাক্কা দিয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে এই বখাটেরা প্রতারণা করে ফোনে ডেকে নিয়ে তাকে (শিক্ষককে) পেটায়।
শমশেরনগর এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, দশম শ্রেণীল মাহিন বখাটে প্রকৃতির। প্রায়ই ছাত্রীরা তার কাছে যৌন হয়রানির শিকার হলে প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে হওয়ায় তার বিরম্নদ্ধে কেউ বিচার প্রার্থনা করতে সাহস পায়না। এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তার বিচার করতে সাহস পান না। মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত মাহিনের বাবা শমশেরনগর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক শামীম বলেন, তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাছাড়া কেউ তার কাছে বিচারও দেয়নি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি নীহার রঞ্জন নাথ ঘটনা ও মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছেলের বাবার বিরম্নদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মামলা রয়েছে। এ বিষয়টি পুলিশ খুবই গুরম্নত্বের সাথে দেখছে।