আ.লীগে বাড়ছে কোন্দল, স্বস্তিতে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক :: পৌর-নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলের মনোনিত প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে দূরত্ব ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বড় অংশ মানছেনা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তারা দলের মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। সংবাদ সম্মেলন, হরতাল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি তাদের। এদিকে তিনটি পৌরসভায় তেমন কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি।
নানা পর্যালোচনা শেষে বরগুনা পৌরসভায় যুবলীগের সভাপতি ও আওয়মী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান মহারাজ, বেতাগী পৌরসভায় বর্তমান মেয়র আলতাফ হোসেন ও পাথরঘাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ার হোসেন আকনকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে বরগুনা পৌরসভার জন্য জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল, পাথরঘাটায় বর্তমান মেয়র মল্লিক আইউব ও বেতাগীতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ন কবিরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের এমন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বেতাগীতে হরতালের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আলতাফ হোসেনকে দেয়া মনোনয়ন বাতিল করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম কবিরকে। মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ মুহুর্তে হেলিকপ্টার যোগে মনোনয়ন পত্র নিয়ে আসেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাচানুর রহমান রিমন।
এ ঘটনায় শুধু দলীয় সমর্থন নয় নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকেও বঞ্চিত হন আলতাফ হোসেন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেয়া গোলাম কবিরের মনোনয়নের সঙ্গে আলতাফ হোসেনের মনোনয়ন বাতিলের চিঠি পেয়ে রিটার্নিং অফিসার শনিবার তার মনোনয়ন বাতিল করেন।
এদিকে এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ শুক্রবার থেকেই আন্দোলনে নেমে পরেছেন। থেমে নেই বিএনপিও। শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী হুমায়ন কবিরকে প্রত্যাখান করেছে উপজেলা বিএনপির একাংশ।
একমত হতে পারেনি পাথরঘাটার বিএনপি নেতাকর্মীরাও। শনিবার সকালে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে মল্লিক আইউবের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। তবে পাথরঘাটায় আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকনের মনোনয়ন নিয়ে তেমন কোনো ক্ষোভ নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে।
অন্যদিকে বরগুনা পৌরসভায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কোনো ক্ষোভ না থাকলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেনা আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা। মনোনয়ন না পাওয়ায় বর্তমান মেয়র শাহদাত হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে প্রতিবাদ সভা ও শনিবার বেলা ১২টায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তার সমার্থকরা। থেমে নেই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ন কবিরও। শনিবার ১১টায় মানববন্ধন ও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি ও তার সমর্থকরা।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমন কর্মসূচি দলীয় প্রার্থীর বিজয় বাধাগ্রস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে দলের মধ্যে কোন্দল তৈরি করছে বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে অনেকেই সতন্ত্র প্রার্থী হলেও তারা ভোটারদের সমর্থনের পিছু না ছুটে এখনও মরিয়া দলীয় মনোনয়ন পেতে।
আওয়ামী লীগ থেকে বরগুনা পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনিত প্রার্থী কামরুল ইসলাম মহারাজ বলেন,‘বরগুনায় বরাবরই সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। তাই আমার বিশ্বাস আওয়ামী লীগ থেকে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী তারা শেষ পর্যন্ত থাকবে না। তারাও এক পর্যায়ে দলের হয়ে আমার নির্বাচন করবেন। তার পরেও যদি তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থাকে তাহলে তারা আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে পরাজিত হবেন।’
বরগুনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমি মনে প্রাণে আওয়ামী লীগ করি, তাই আমি মনে করি না আমি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আমি আশাবাদী, আমিই আগামীতে আবারো মেয়র নির্বাচিত হবো।’
বরগুনায় বিএনপির মনোনিত প্রার্থী এস এম নজরুল ইসলাম বলেন,‘বরগুনা জেলা উপজেলা বিএনপিতে তেমন কোনো বিভেদ নেই। তাই বিদ্রোহী প্রার্থীও নেই। আমরা আশা করছি বরগুনার তিন পৌরসভায়ই বিএনপি মনোনিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।’