‘আদালতে ক্ষমা চাইবেন দুই মন্ত্রী’
নিউজ ডেস্ক :: প্রধান বিচারপতি ও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তির্যক মন্তব্য করায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, এমপি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ খ ম মোজাম্মেল হক আদালতে ক্ষমা চাইতে পারেন বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার।
সোমবার সকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আজ আমরা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট শাখায় জবাব দাখিল করব। আগামীকাল মঙ্গলবার আদালত অবমাননার শুনানি হবে।’
তিনি বলেন, লিখিতভাবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন।
গত ৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ ১৪ মার্চ (আজ ) দুই মন্ত্রীকে তাদের বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে পরদিন অর্থাৎ আগামীকাল (১৫ মার্চ) তাদের সশরীরে সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে মর্মেও আদেশ আছে।
তবে এ মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন খাদ্যমন্ত্রী। সময় আবেদন করবেন কি না জানতে চাইলে তাদের আইনজীবী বলেন, ‘সেটিও আগামীকাল আবেদন করব।’
এরআগে ৫ মার্চ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন একটি বেঞ্চ গঠন করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানি দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মীর কসেম আলীর আপিল মামলা শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং তদন্ত সংস্থা যে গাফিলতি করেছে এজন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।’
এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিকে যদি ছেড়ে দেন। দণ্ড যদি কমিয়ে দেন, মামলা যদি রিমান্ডে দেন। তাহলেও আমরা ন্যায় বিচার পাবো না। আমি একজন বিচার প্রার্থী হিসেবে ন্যায় বিচার পাবো না। আসামিকে যদি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও করা হয় তাহলেও সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কাজেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে যে আপিলের বেঞ্চ। সেখান থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে একটা বেঞ্চ গঠন করা হোক এবং আপিল শুনানি পুনরায় হোক। রাষ্ট্রপক্ষের যে প্রধান কৌসুলি তাকেও মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।’
একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি মহোদয় যদি ওপেন কোর্টে এ ধরনের মন্তব্য করেন, হয় সেটা প্রত্যাহার করে নিন, নয়তো তিনি এটা মনে করলে প্রধান বিচারকের আসনে আসীন থাকার সুযোগ কতটুকু থাকে, তা বিচারের ভার তার ওপরই আমরা রাখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বিচারপতিরা আইনের ঊর্ধ্বেও নন। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে সেটা বলা আছে। আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। কাজেই আইনটা সকলের জন্য সমান।’
দুই মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং সুপ্রিম কোর্টের সম্মান ও মর্যাদাকে হেয় করার শামিল বিবেচনা করে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করেছে আপিল বিভাগ। ওই বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে নোটিশে।
আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে অশুভ ও অবমাননাকর বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা স্তম্ভিত, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।’