গভর্নর দিল্লিতে বসেই শুনেছিলেন তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে
নিউজ ডেস্ক :: আতিউর রহমান জানতেন তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। দিল্লি সফরকালেই এমন বার্তা পেয়েছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে তার ঘনিষ্ঠজনরা তথ্যটি সরবরাহ করেছিলেন।
তারা এ-ও জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রীই তার কাল হয়েছেন। তার বিরাগভাজন হওয়াতেই ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি তো আগে থেকেই চটে ছিলেন। রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনাতেই অতীতের সব পাওনা বুঝে নিতে চান মন্ত্রী। এ ঘটনায় গভর্নরের বিদায় ছাড়া অন্য কিছুই মানছেন না তিনি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নীরবে পুরোটা শুনেছেন কিন্তু কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেখাননি। আতিউর রহমান সেই খবরও জানতেন। ঢাকায় যখন তাকে নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, দেশব্যাপী তোলপাড় তখনও দিল্লিতে প্রায় স্বাভাবিক ছিলেন পোড় খাওয়া এই অর্থনীতিবিদ।
আইএমএফ আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সিং এশিয়া কনফারেন্সে’ বক্তৃতা দেয়া ছাড়াও সাইড লাইনে বিভিন্ন বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে স্বাগতিক ভারতসহ এশিয়ার অনেক দেশের গভর্নররা অংশ নিয়েছিলেন। আইএমএফ’র চেয়ারপারসন ও সাবেক ফরাসি অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লাগার্দও তাতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে বাংলাদেশের গভর্নর আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন।
ভারত সরকারের আতিথেয়তায় দিল্লির বিলাসবহুল তাজ হোটেলেই ছিলেন ড. আতিউর। তার আমলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজকোষ লুটের ঘটনা নিয়ে তিনি যে খুব চিন্তিত, সেটি তার চেহারা দেখে টের পাননি সফর-সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য তিনি আগাগোড়া আশাবাদী ছিলেন। অন্যরা যাই করুক, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তাকে রক্ষা করবেন।
সেই সময়ে দিল্লিতে থাকা ঢাকার এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপে এমন দৃঢ় আশাবাদের কথাই শুনিয়েছিলেন গভর্নর। কিন্তু রহস্য তখনও ছিল। রাজকোষ কেলেঙ্কারির বিতর্কের পটভূমিতে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশন তাকে নিয়ে খানিকটা উদাসীন ছিল। তার প্রটোকলে বরাবরের মতো দায়িত্বপ্রাপ্তরা থাকলেও এবারে তিনি ছিলেন তাদের বৃত্তের বাইরে।
দিল্লি থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা এতটাই সতর্ক ছিলেন যে, হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তার সফরের কোনো ছবি বা নিউজ আপলোড করা হয়নি।
দিল্লি থেকে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো ড. আতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, তাকে বরখাস্ত করার আয়োজনের খবরটি পাওয়ার পরপরই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলেন তিনি। তার ফেরা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণের অনুরোধ জানান।
তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। তাকে যেন একটি সম্মানজনক প্রস্থানের সুযোগ দেয়া হয় সেই আবেদনও করেন। প্রধানমন্ত্রী তার আবেদনটি রেখেছেন। তিনি তাকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি না দিয়ে পদত্যাগের সুযোগ দিয়েছেন। রাখাল থেকে গভর্নরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনীতির ওই শিক্ষকের ‘সততা’র প্রশংসাও করেছেন সরকার প্রধান।
নিউজ : মানবজমিন