মুখে তালা তবু হতাশ নন মির্জা ফখরুল
নিউজ ডেস্ক :: বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর ওপরে সরকারের চরম নির্যাতন-নিপীড়নের পরও ‘হতাশ নন’ বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- সরকারের নির্যাতন, অপশাসন ও দুঃশাসনের অবশ্যই অবসান হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনই এই ধরনের দুঃশাসন সহ্য করবে না। তারা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর এই লড়াইয়ে দেশবাসী জয়ী হবেই।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ‘আমার দেশ পরিবার’ আয়োজিত এক প্রতিবাদী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ফখরুল। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দিত্বের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি। পার করছি দুঃসময়। তবে দুঃসময় সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতাও আছে। আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী এ দেশে বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত শাসন দেখেছি। তখন চারটি পত্রিকা রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। গ্রামে-গঞ্জে তখন আমরা নিদারুণ নির্যাতন দেখেছি। অনেক মানুষকে তখন হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানেও দেশে ঠিক একই অবস্থা বিরাজ করছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই কারো মত সহ্য করে না। তারা সহিষ্ণুতার রাজনীতি করে না। সব সময় দাম্ভিকতার ব্যাধিতে ভোগে। তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নতুন করে আমাদের আর জানার দরকার নেই। দেশে কার্যত ‘এক ব্যক্তি ও এক দল’র শাসন চলছে।’
বিরোধী দলের ওপর সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যারা গণতন্ত্রের কথা বলছি, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য কাজ করছি; তারা সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৫০০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। প্রায় তিনশর উপরে নেতাকর্মী গুম-নিখোঁজ হয়েছে। ৭৪ হাজার মামলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমাদেরকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।’
বিএনপির অতীত ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে বর্তমান মহাসচিব বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমাদের ভুলত্রুটি আছে, অবশ্যই আছে। তবে সেসব ভুলত্রুটিকে এখন বড় করে না দেখে সেগুলোকে শুধরে নিয়ে গণতন্ত্রর জন্য আমাদেরকে সঠিক পথে অগ্রসর হতে হবে। সে জন্য দলের মধ্যে যেমন ঐক্য দরকার, তেমনি গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে জাতীয় ঐক্যও প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়াও জাতীয় ঐক্যর ডাক দিয়েছেন। তিনি (খালেদা) আহ্বান জানিয়েছেন- আসুন, দেশের মানুষ ও সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা এক সাথে কাজ করি। আলোচনা করে সুদিনের পথ ঠিক করে এক সাথে সেই পথে চলি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের এই কথা শোনার মতো এখানে কেউ নেই।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সাথে আমরাও আজ নির্যাতিত। আমরা বন্দি হয়ে আছি। আমাদের সমস্ত মুখে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। আমাদের কথা বলতে দেয়া হয় না। আমি যেখানে মিটিং করতে যাই সেখানেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে আমরা গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করছি। এই লড়াইয়ে কখনো সাময়িক ব্যর্থতা আসতে পারে। কিন্তু সে জন্য হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ হতাশা কখনো আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না। ইতিহাস প্রমাণ করে, এই আন্দোলনে আমরা সফল হব, বাংলাদেশের মানুষ সফল হবে।’
তিনি মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং আমার দেশ পত্রিকার প্রেস খুলে দেয়ার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, ঢাবির সাবেক উপ-উপাচর্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আ ন হ আকতার হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে, একাংশ) মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে, একাংশ) মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ।