‘ছেলে আমার সেই যে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল আর ফিরে এলো না’
নিউজ ডেস্ক :: যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীতে বাবা-মায়ের কাছে পরম আরাধ্য ধন কি? নিশ্চিত উত্তর আসবে, বুকের মানিক সন্তান। তাইতো এ আরাধ্য ধনকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করতে চান না বাবা মা। কিন্তু সেই সন্তান যদি দিনের পর দিন ধরে নিখোঁজ থাকে তাহলে? সন্তানের খোঁজে দিগ্বিদিক এ দ্বার থেকে ও দ্বারে ছুটে বেড়ানো।
নিজের বুকের মানিককে খুঁজে বের করতে ঠিক এভাবেই দ্বারে দ্বারে ছুটছেন রাঙ্গুনিয়ার কাঞ্চনী বেগম ও তার স্বামী মো. করিম। ৯দিন ধরে ছেলে মো. হারুনের (২৮) কোন খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। যেন অনেকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। গ্রামের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, প্রশাসন কারও সহযোগিতা না পেয়ে ছেলেকে খুঁজতে পথে নেমেছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, ‘ছেলে আমার সেই যে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল আর ফিরে এলো না। এতদিন হয়ে গেল ছেলের কোন খোঁজ পাচ্ছি না। আমার ছেলেকে কারা ধরে নিয়ে গেল। ’
কান্না থামিয়ে একটু থিতু হয়ে কাঞ্চনী বেগম বলেন, ১২ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে ছেলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। মোবাইলে কাকে যেন বলছিল, ‘তুই রাগ করিস না। আমার মোবাইলে চার্জ ছিল না। তাই মোবাইল বন্ধ ছিল। ’ এ কথা বলতে বলতে ছেলে সেই যে গেল আর এলো না। আজ ৯দিন হয়ে গেল আমার মানিকের দেখা এখনো পেলাম না।
এদিকে ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ বাবা মো. করিম। তিনি বলেন, তিন ছেলের মধ্যে বড়টা বউ নিয়ে আলাদা থাকে, ছোটটা এখনো লেখাপাড়া করছে। আর মেঝো ছেলে হারুন গাড়িচালক। গাড়ি চালিয়েই সে সংসারের সব খরচ চালাতো। সেই ছেলেরই কতদিন ধরে দেখা নেই। কার কাছে যাবো আমরা। কোথায় পাবো আমাদের ছেলেকে?
রাঙ্গুনিয়ার এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কাঞ্চনী বেগম বলেন, রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচু বাগানে আমাদের দুইতলা পাকাবাড়ি ছিল, দোকান ছিল। ওই নেতা আমার বাড়িঘর সবকিছু ভেঙে জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমাকে ভয় দেখিয়েছিল, যদি জায়গাজমি না ছাড়ি তাহলে ছেলেদের ক্ষতি করবে। ছেলেদের বাঁচাতে আমি সব ছেড়ে রাঙ্গুনিয়ার মোগলেরহাট আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসি। কিন্তু কি লাভ হলো। শেষমেষ ওরা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানায় গিয়ে অপহরণ মামলা দায়ের করতে চাইলেও তা না নিয়ে পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলে অভিযোগ করেন এ বৃদ্ধ মা।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির এ বিষয়ে বলেন, নিখোঁজের ঘটনায় আমরা জিডি নিয়েছি। তবে এটি অপহরণ কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোবাইল ট্রেস আউটের মাধ্যমে নিখোঁজকে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
কিন্তু মায়ের মন কি আর এতকিছু বোঝে। তাই ছেলেকে ফিরিয়ে দেবার আকুতি জানিয়ে এ মা বলেন, ‘আমার জায়গা-জমি কিচ্ছু লাগবে না, আমি আমার বুকের মানিককে ফেরত চাই, তোমরা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। ’