এবার ২ শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতন
নিউজ ডেস্ক :: কবুতর চুরির অপবাদে এবার দুই শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এক বিএনপি নেতা। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ছোট বাশাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কিন্তু ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। পরবর্তীতে এক কান দু’কান করে বিষয়টি চাউর হয়ে গেলে সর্বমহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সেই সাথে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এখন নির্যানতকারীদের হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা গা-ঢাকা দেয়ায় সফলতা পাচ্ছে না তারা।
নির্যাতিত ওই দুই ছাত্র হচ্ছে- আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট বাশাইল গ্রামের খোকন বেপারীর ছেলে ও ছোট বাশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাগর বেপারী (১০) এবং একই এলাকার মোহাম্মাদ আলী শিকদারের ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তুষার শিকদার (১২)।
তাদের মধ্যে সাগরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই দুই শিশুকে কবুতর চুরির মিথ্যে অপবাদ দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ছোট বাশাইল কালুশা মাজারের একটি নারকেল গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। পরে রাজিহার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বিএনপির নেতা মো. বরকত উল্যাহর নেতৃত্বে স্থানীয় মনির চৌকিদার, নাসির চৌকিদার এবং তাদের সহযোগিরা তিন ঘন্টাব্যাপী দুই শিশুর ওপর শারিরিক নির্যাতন চালায়।
খবর পেয়ে সাগরে মা রওশনারা বেগম ঘটনাস্থলে এসে ইউপি সদস্যের হাতে পায়ে ধরে নির্যাতন বন্ধের অনুরোধ করেন। কিন্তু এতে কোনো কর্ণপাত না করে উল্টো রওশনারা বেগমকেও শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরবর্তীতে রওশনারা বেগম তার ভাই আব্বাস উদ্দিনকে খবর দেয়ার পর তিনি এসে আহত দুই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সাগরের মা রওশনারা বেগম অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে মেম্বার বরকত উল্যাহ গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত বিচার চান তিনি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য বরকত উল্যাহ বলছেন, তিনি নির্যাতন করেননি। স্থানীয় মনিরসহ বেশ কয়েকজন শিশুদের গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করেছে।
ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাকে ফোনে জানিয়েছেন।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার বেলা ৩টার দিকে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। এসময় সাথে সাথে তিনি নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ দিয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু নির্যাতনকারীরা গাঢাকা দেয়ায় গ্রেপ্তারে সফলতা আসছে না।
প্রসঙ্গত, এর আগে খুলনায় রাকিব, সিলেটে রাজনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। নির্যাতনের সময় ভিডিও চিত্রও ধারন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার হলে গোটা দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে যায়। এ কারণে দ্রুত বিচারে দোষীদের শাস্তির রায়ও দেয়া হয়। কিন্তু এতোকিছুর পরেও থামছে না শিশু নির্যাতনের ঘটনা।