ভাইধন রে কইয়ো নাইওর নিতো বইলা…
নিউজ ডেস্ক : “কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া/আমার ভাইধন রে কইয়ো/নাইওর নিতো বইলা/তোরা কে যাস কে যাস।” শচীন দেব বর্মনের এই কালজয়ী গানে বাপের বাড়ি নাইওর যেতে ভাইয়ের আগমনের পথ চেয়ে গ্রামীণ বধূর আবেগতাড়িত আবেদন ঝরে যেন। ঠিক যেমনটি ঝরছে কিশোরী বধূ শামীমা’র, তার ভাইয়ের জন্য। তবে সে শ্বশুর বাড়িতে নয়, ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। শেষবারের মতো ‘নাইওর’ যাওয়ার পথ চেয়ে।
শেরপুরের সোনাইদীঘী গ্রামের ১৫ বছর বয়সী চঞ্চলা-চপলা কিশোরী শামীমা শুয়ে আছে ঢামেকের মর্গে। কাপড় দিয়ে ঢাকা মাথা থেকে পা পর্যন্ত। কাপড়ের ফাঁক গলিয়ে হাতের সম্মুখভাগ আর পায়ের সম্মুখ ভাগ বেরিয়ে আছে। ফর্সা। ধবধবে ফর্সা।
কী হয়েছে শামীমার? মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন উত্তর দিলেন, ‘গলায় ফাঁসি দিছে বেচারী। কী যে কষ্ট আছিলো কে জানে। মইরা গেছে। এখন ভাইয়ের জন্য ‘অপেক্ষা’ করতাছে হাসপাতাল। ভাই আইসা লাশ তুইলা নিয়া যাইবো।
অথচ এক বছর আগেও শামীমা সোনাইদিঘী গ্রামের রাস্তায় উড়ে বেড়িয়েছে প্রজাপতির মতো। বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুলে গিয়েছে, স্কুলের শ্রেণিকক্ষ মাতিয়ে রেখেছে দারুণ খুনসুটিতে।
কিন্তু কৈশোরের গণ্ডি না পেরোতেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের সিদ্ধান্তে পাশের গ্রামের ছেলে খাইরুলের সঙ্গে জীবনের গাঁটছড়া বেঁধে ফেলতে হয় তাকে।
স্বামী খাইরুল ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। বিয়ের পর শামীমাকেও নিয়ে আসেন ঢাকায়। ওঠেন মিরপুরের ১৩/২ বাইশটেকীতে। বিয়ের ৮ মাস পর থেকে এখানেই থাকছিলেন তারা। অভাবের সংসার। শখ-আহ্লাদ পূরণ হয় না। খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে শামীমার।
উপায়ান্তর না পেয়ে একটি কারখানায় শামীমার জন্য কাজের ব্যবস্থা করেন খাইরুল। কিশোরী বধূ সপ্তাহখানেক আগে কাজে যোগ দেয়। কিন্তু কী নিয়ে যেন স্বামীর সঙ্গে অভিমান হয় তার। সে অভিমান নববধূ শামীমা সহ্য করতে পারেনি।
সোমবার দিনগত রাত ৯টায় শামীমার সঙ্গে শেষ কথা হয় স্বামী খাইরুলের। খাইরুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘শামীমার পায়ে ফোঁড়া হইছিলো। আমি ব্যথা কমার জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ আইনা দিলাম। কেন যে রাগ কইরা ছিলো জানি না। আমারে বলল, আমি ওষুধ খামু না। আমি মরলেই কী, আর বাঁচলেই কী। আমি ওষুধ আর পানি টেবিলে রাইখা বাসা থেইকা বাইর হইয়া যাই।’
‘১০টার সময় বাসায় ফিরা দেখি দরজা ভেতর থেকে লাগানো। অনেক ডাকাডাকির পরও খুলতাছে না দেইখা দরজা ভাইঙা ভেতরে গিয়া দেখি ফ্যানের সাথে ঝুলতাছে।’
তিনি জানান, সোনাইদিঘীতে শামীমার বাবা-ভাইকে খবর দেওয়া হয়েছে। সে চিরদিনের জন্য ‘নাইওর’ যাবে সোনাইদিঘীতে।