বিরোধী দলকে ঘায়েল করতেই অভিশংসন আইন
বিচারপতিদের অভিশংসন ও অপসারণ আইন প্রণয়নের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে ক্ষমতার মসনদকে নিষ্কণ্টক করা এবং তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা’ এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘এই আইন পাশের মাধ্যমে সরকার বিচার ব্যবস্থাকে বিরোধী দলসহ গণমাধ্যম এবং গণতন্ত্রে স্বীকৃত সকল অধিকারকে আরো নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে সক্ষম হবে। ভোটারবিহীন সরকার প্রধানের ক্ষমতার প্রতি কেউ যেন নাড়া দিতে না পারে সেই জন্যই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ চলছে।
তিনি বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসন ও অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে এখন জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত হবে। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের এই আইন পাশ করা হলে সংবিধানের সর্বশেষ স্তম্ভটুকুও বিলীন হয়ে যাবে।
‘বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নিতে সম্প্রতি নতুন আইন পাশ করেছে মন্ত্রিসভা’ উল্লেখ কর রিজভী বলেন, ‘বিচারপতিদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ও তাদের ওপর নগ্ন আগ্রাসন করতেই এমন আইন করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।’
‘এটি স্বাধীন বিচারকার্য পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি করবে এবং মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। এটি পাসের মাধ্যমে সরকার পুরোপুরি বিচারপতিদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ভীতিকর। চাপ সৃষ্টির জন্যই এটি করা হচ্ছে। বিচারপতিরা যেন সরকারের ইচ্ছামতো কাজ করে সে জন্যই এই আইন করা হচ্ছে। এই আইন কার্যকর হলে ন্যায়বিচার শিকেয় উঠবে’, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ভোটারবিহীন সরকারের তিনজন মন্ত্রী উচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় সরকারের মধ্যে একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর সে কারণেই তড়িঘড়ি করে বিচারপতিদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই নতুন আইন পাশ হতে যাচ্ছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।’
রিজভী বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের হাস্যকর অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যই হলো-তাঁর কণ্ঠরোধ করে দেওয়া, যাতে তিনি দেশে-বিদেশে বিএনপির পক্ষে কথা বলতে না পারেন। ওসমান ফারুককে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরনের ঘৃণ্য চক্রান্ত করা হচ্ছে।’
সরকার আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে ভয়াবহ হরিলুট, রাজকোষ কেলেঙ্কারি ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিসহ সর্বত্রই বিশৃঙ্খলায় দেশের জনসমাজে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় সরকার টালমাটাল হয়ে পড়েছে। তারা একদিকে জনগণের অর্থ লোপাট করছে অন্যদিকে জনগণের কাছ থেকে জুলুম করে টাকা আদায় করছে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে। এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে নইলে জনগণকে সাথে নিয়ে গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘এরা অন্ধকারের রাজনীতি করেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কখনও জিতবেন না। সুষ্ঠু নিরেপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন হলে তাকে তলানিতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মন্ত্রী ও এমপিও হতে পারবেন না। এই করণে ইনুর কাছ থেকে জনগণের পক্ষে কোনো আইন আশা করা যায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশিদ প্রমুখ।