ভালোবেসে বিয়ে, অবশেষে…
নিউজ ডেস্ক: মাত্র দেড় বছর হয়েছে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। কিন্তু প্রাণের সেই স্বামীর হাতেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হলেন রিফাহ তাসফিয়া। যৌতুকের জন্য তাঁর হাত-পা পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বেদম পিটুনিতে ভেঙে গেছে তাঁর বুক ও পিঠের হাড়। মারাত্মক জখম হওয়ায় মাথায় লেগেছে ১৬টি সেলাই।
গত সোমবার দুপুরে রাজশাহী নগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকায় এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন। এ বছর রাজশাহী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তাসফিয়া।
তাঁর বাবার নাম আবদুস সালাম। বাড়ি রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়। তাসফিয়ার স্বামী সামিউল হক ওরফে সোয়াদ রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে পড়ছেন। নগরের ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনির ফজলুল হকের ছেলে তিনি। তাসফিয়া-সামিউল দম্পতির ছয় মাসের একটি মেয়ে রয়েছে। খবর প্রথম আলো।
মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় তাসফিয়ার মা হোসনে আরা পারভীন বাদী হয়ে নগরের রাজপাড়া থানায় মামলা করেছেন। এতে সামিউল, তাঁর দুই ভাই, মা ও বাবাকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সামিউলকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাসফিয়ার চাচা আবু সাঈদ বলেন, পরিবারের অমতে তাসফিয়া বিয়ে করেন। কিন্তু তিন মাস পর পারিবারিকভাবে সেই বিয়ে মেনে নেন সবাই। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন সামিউল। পরে নানা কথা বলে মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে দেন তাসফিয়া।
কিন্তু স্বামীর যৌতুক চাওয়ার কথা লজ্জায় কাউকে বলেননি। সর্বশেষ তিন লাখ টাকা যৌতুক চান সামিউল। এই টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শুরু হয় নির্যাতন। কিন্তু সেই নির্যাতনের কথাও কাউকে জানাননি তাসফিয়া। এমনকি সোমবারের ঘটনাও না। পরে সামিউলের ভাই ফয়সাল ফোন করে বিষয়টি তাসফিয়ার পরিবারকে জানান।
আবু সাঈদ বলেন, তাসফিয়ার বাবা দূরে থাকায় ফোন পেয়ে তিনিই (আবু সাঈদ) মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তাসফিয়াকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন সামিউল বাসায় ছিলেন না। তাঁর মা ও ভাই বাসায় থাকলেও কেউই তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি। পরে তিনি তাসফিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তাসফিয়ার বর্ণনার বরাত দিয়ে আবু সাঈদ বলেন, ঘটনার সময় তাসফিয়া তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে খাটে শুয়ে ছিলেন। বাচ্চাটা কাঁদছিল। হঠাৎ সামিউল এসে তাসফিয়াকে বলেন, ‘বাবার বাড়ি থেকে টাকাও এনে দিতে পারবি না। আবার বাচ্চাও সামলাতে পারবি না।’
এ কথা বলেই তাসফিয়াকে টান দিয়ে খাট থেকে নিচে ফেলে দেন সামিউল। এরপর খাটের নিচ থেকে একটা জিআই পাইপ বের করে বেদম পেটাতে থাকেন। এতে তাসফিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। মাথা ভেসে যাচ্ছিল রক্তে। পরে তাঁর শাশুড়ি এসে রক্তে ভেজা চুল পানি দিয়ে ধুয়ে দেন। কিন্তু কেউই উদ্ধার করে হাসপাতালে নেননি। এ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ ভেজা মেঝেতে পড়ে ছিলেন তিনি।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তাসফিয়াকে স্থানান্তর করা হয়। ওসিসির উপপরিদর্শক নাজমা খানম বলেন, নির্যাতনে তাসফিয়ার ডান হাতের এক স্থান, বাম হাতের দুই স্থান ও বাম পায়ের একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। বুকের দুটি হাড় ও পিঠের একটি হাড়ও ভেঙেছে। মাথায় লেগেছে ১৬টি সেলাই।
নগরের রাজপাড়া থানার ওসি আমানুল্লাহ জানান, গতকাল বেলা পৌনে তিনটার দিকে সামিউল বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।