গুলশানে হামলাকারীদের যেভাবে ‘আটকে’ দেয় টহল পুলিশ
নিউজ ডেস্ক :: গুলশানে হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা পুলিশের একটি টহল টিমের ‘প্রাথমিক প্রতিরোধে’ হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে ‘অবরুদ্ধ’ হন। হামলার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীদের ঠেকাতে পুলিশের টহল টিমটি এগিয়ে যাওয়ায় জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওই টহল টিমের দলনেতা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন। ওই ঘটনায় তিনি আহত হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত ১ জুলাই শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার পর গুলশান থানার একটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছিল গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের পাশে। টিমের দলনেতার ওয়াকিটকিতে গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বার্তা পাঠায়, ‘লেকভিউ ক্লিনিকের পাশে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে’। এই বার্তা শুনে একটু পরেই তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
টহল টিম সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, লেকভিউর পাশে হলি আর্টিজান বেকারি ও কিচেন রেস্তোরাঁর প্রধান ফটকের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় আছে আবদুর রাজ্জাক রানা নামের একজন। তিনি জাপানি এক নাগরিকের গাড়ি চালান বলে পুলিশকে জানান। তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেন তাকে বাঁচানোর এবং বলেন, ‘ভেতরে অনেককে হত্যা করা হয়েছে’।
টহল টিমের সদস্যরা বেকারির দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ভেতর থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত বের হয়ে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। গ্রেনেডের আঘাতে টহল টিমের তিন সদস্য আহত হন। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে দুর্বৃত্তরা আর্টিজানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এসময় তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সন্ত্রাসীদের গুলি ও গ্রেনেড ছোঁড়ার খবর দেন। এর আগে পুলিশের টহল টিমকে দেখে বেকারির বাইরে অবস্থান নেওয়া একটা প্রাডো গাড়ি দ্রুত বেরিয়ে যায়। এসআই ফারুক জানান, সম্ভবত গাড়িটি জঙ্গিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল।
ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশের অন্য টিম না আসা পর্যন্ত কিছু কৌশল নেওয়া হয় যেন সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করা যায়। আর তারাই প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। এসময় টিমের দুজন সদস্য আহত হয়ে পড়লে তাদের শটগান নিয়ে ফারুক কিছুক্ষণ পরপর গুলি করতে থাকেন। পিস্তল থাকার পরেও শটগান দিয়ে গুলি করেছিলেন তিনি, কারণ শটগানের গুলির শব্দ হামলাকারীদের আতঙ্কিত করতে পারে। গুলি যেন শেষ না হয়ে যায়, সেজন্য সময় নিয়ে নিয়ে গুলি করেছেন এই এসআই।
পরে পুলিশের অন্যান্য টিম আসলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসআই ফারুকের পায়ে ৮টি স্প্লিন্টার গেথেছে এবং ডান পা ভেঙে গেছে। তিনি এখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া টহল টিমের সদস্য কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস ও আলমগীর হোসেন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ১২ জুলাই এই দুইজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এছাড়াও সদস্য রুবেল ও জিয়া সামান্য আহত হয়েছেন।
টহল টিমের সদস্য প্রদীপ চন্দ্র দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু টহল টিমের প্রতিরোধে তারা রেস্তোরাঁর ভেতরে চলে যায়।
গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ১৩ জুলাই বুধবার বলেন, ফারুক সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এখানো ফারুকের অপারেশন করা হয়নি। এই পর্যন্ত জানেন তিনি। তবে আহত দুই পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ-খবর জানেন না বলে জানিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম।
গত ১ জুলাই আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা সন্ত্রাসী হামলায় চালায়। এরপর ওই রেস্তোরাঁয় থাকা ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০-৩৫ জন লোকজনকে জিম্মি করে রাখে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। পরে জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই ধরনের অতর্কিত হামলা চালিয়ে মানুষজনকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।
পরের দিন ভোরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। চালিয়ে জিম্মি হওয়া ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে এবং ২০ জন বিদেশি নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদশে দুই দিনের শোক পালন করে বাংলাদেশ।
গুলশানের জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা করে বাংলাদেশে আরও হামলার হুমকি দেওয়া হয় আইএসের নাম করে।