ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হেরে গেলেন থেরেসা মে, হুইল চেয়ারে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু নাতনি টিউলিপ
মকিস মনসুর, যুক্তরাজ্যে থেকেঃ
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি হাউস অব কমন্সে ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতের ভোটাভুটিতে নাকচ হওয়ায় হেরে গেলেন থেরেসা. এখন থেরেসার সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। একটি হল তিন দিনের মধ্যে পার্লামেন্টে নতুন আরেকটি চুক্তির খসড়া তোলা। অন্যটি হচ্ছে ইইউর দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মার্চ থেকে আবার বাড়িয়ে নেওয়া। আর তা না হলে আগামী ২৯ মার্চ এক রাতেই ইউরোপের ২৭টি দেশের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হবে যুক্তরাজ্যকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের পথরেখার যে পরিকল্পনা থেরেসা মে পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছিলেন, প্রস্তাবটি বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৪৩২ জন সংসদ সদস্য, যেখানে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২০২ জন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তিটি ২৩০ ভোটের বিশাল ভোটের ব্যবধানে নাকচ করে দিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা।এই প্রথম দেশটির কোনো ক্ষমতাসীন সরকার পার্লামেন্টে এত বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হলো। থেরেসা মের এই পরাজয়ের পর যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে অর্ধ শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। তবে ভোটে হারার পর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটকে স্বাগত জানাবেন তিনি। প্রস্তাবের বিষয়ে বুধবার তিনি বিতর্কে অংশ নিতে পারেন। লেবার পার্টি লিডার জেরেমি করবিন এখন সরকারের ওপর একটি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, যা দেশটিতে একটি সাধারণ নির্বাচনে গড়াতে পারে। লেবার নেতা করবিন বলছেন, এই সরকারের পরিষ্কার অদক্ষতার ব্যাপারে কমন্স সদস্যদের মতামত জানানোর সুযোগ করে দেবে এই আস্থা ভোট।এদিকে সংসদ সদস্যরা যদি অনাস্থা ভোট সমর্থন করেন, তাহলে সরকার বা অন্য যে কেউ পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন, তাদের পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে আরেকটি আস্থা ভোটে বিজয়ী হতে হবে। সেটি না হলে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ক্ষেত্রে এ ধরনের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের ওপর বিশাল পরাজয়ের পর আশা করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন।
তবে ভোটাভুটির পরেই মিসেস মে আভাস দিয়েছেন যে, তিনি সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখবেন। ”হাউজ তাদের মতামত দিয়েছে এবং সরকার সেটি শুনবে, ”সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন। সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্রেক্সিটের বিষয়ে করণীয় ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
ভোটের ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন যাতে তারা যত দ্রুত সম্ভব ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়টি পরিষ্কার করে। এখানে উল্লেখ্য যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেরীতে সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দীক। বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের অপারেশনের মাধ্যমে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের জন্য মঙ্গলবার হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি হবার কথা থাকলেও ব্রেক্সিট ইস্যূতে পার্লামেন্টে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টিউলিপ।
বেক্সিট সংক্রান্ত বিলে ভোট দেওয়ার জন্য অপারেশন দুই দিন পিছিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ এই এমপি। স্বামী ক্রিসের সহায়তা নিয়ে হুইল চেয়ারে করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মঙ্গলবার ভোট দিতে যান টিউলিপ সিদ্দিক। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ বলেন, ‘তার সন্তান যদি পৃথিবিতে একদিন পরেও ভুমিষ্ট হয় তার বিনিময়ে তিনি ব্রিটেনের সাথে ইউরোপের ভবিষ্যত সম্পর্ক সুদৃঢ করতে চান।’