কী চলছে মৌলভীবাজারে !
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে, ২০১৯ ৩:২৮ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ৯৬৮ বার পঠিত
মুনজের আহমেদ চৌধুরীঃ
প্রভাবশালী একজন দোকান মালিক কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা একজন সরকারী কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করলেন। ভোক্তা অধিকারের কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে তার দোকানের কর্মচারীদের দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলেন। বৃহস্পতিবার শত শত মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটাবার দায়ে এখনো কেউ গ্রেফতার হননি। প্রশাসন এখানে বিব্রত।
কারন, তারা নাকি মাসোহারা পান কয়েকটি বড় দোকানের মালিকের কাছ থেকে। তাদের ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য প্রশাসন পুরো রাস্তায় মানুষের চলাচল রীতিমত ব্যাহত করে। তারা ভারতীয় শাড়ি, লেহেঙ্গা কসমেটিকস আমদানি, বর্ডার পেরুনো মালের ব্যবসা করেন। করে আসছেন যুগ যুগ ধরেই। বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের রাজনীতিবিদের তারা সময়ে সময়ে বড় চাদাঁ দেন। নির্বাচনে বড় সাহায্য করেন। সেটা তারা সব শহরেই দেন। কিন্তু, অন্য শহরে রাজনীতিবিদরা হাইব্রিড টাকাওয়ালাদের সব অপরাধে নীরব থাকেন না।
রির্সোটের নামে জেলা জুড়ে কী না চালাচ্ছে কালো টাকা, যা খুশি! আর শহরের সাধারন মানুষ? তারা আর কী করবেন? মেডিক্যাল কলেজ হতে হলে প্রথমে এ ক্লাস জেলা হতে হয়। জেলা এ ক্লাস না হলেও কিছু আন্দোলনকারী মৌলভীবাজারে মেডিক্যাল কলেজের দাবীতে আন্দোলন করছেন। জেলা প্রথম শ্রেনীর হবার কাজটা দরকার আগে। মনু নদী দখলদারদের দখলে, খননের অভাবে সরু নালার মত হয়ে গেছে।
প্রতি বছর বন্যা মৌসুমে এ নদীর কারনে লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হন। লাখ লাখ মানুষ বিপদে পড়েন। তবু ঠিকাদারের কাজ, প্রকল্প কোনটাই শেষ হয় না। তারপরও, কিছু মানুষ রাস্তায় নামে, আন্দোলন করে। ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। বাকীরা দেখেন। প্রবাসীরা লাইক-কমেন্ট করেন। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমাদের ভালবাসার মৌলভীবাজার খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
এই রোজায়ও দুটো খুন হল। ছিনতাইকারী বলে একটা ছেলেকে স্রেফ মেরে ফেলা হল পুর্ব শত্রুতার জেরে। নারী আইনজীবী খুন হলেন নিজ ঘরে। পুলিশ দ্বিতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে যতটা তৎপর, প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হওয়া প্রথম ছেলেটার ক্ষেত্রে ততটাই নীরব। শুধু এখানেই নয়, যেখানে অপরাধী প্রভাবশালী, আইন সেখানেই নীরব। জেলা জুড়ে একই বিচারহীনতা, সামাজিক ও উন্নয়নবঞ্চনার চিত্র। শমশেরনগর থেকে বড়লেখা রাস্তা ঘাট সব ভাঙ্গাচোরা। দেশের অনেক জেলা ঘুরে দেখলাম, গত দশ বছরে সবচেয়ে বোধহয় কম উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে মৌলভীবাজারে। বড় কোন প্রকল্প নেই, শিল্প নেই, ভালো কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান নেই। এ জেলা দেশের গ্যাসের জোগান দেয়।
অথচ জেলার বহু এলাকার মানুষের বাড়ীতে গ্যাস নেই। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে, ভোগান্তিতে মানুষজন চরম বিরক্ত। কিন্তু, তাতে কী হবে? মৌলভীবাজার জেলা শহরের এখন ঘুম ভাঙ্গে সাড়ে দশটার পর। আমাদের শান্তির জেলা,সবুজ সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের চেনা মৌলভীবাজার খুব দ্রুত অচেনা হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের সুচকের মতো মানবিকতা-নৈতিকতায় নীচে নেমে যাওয়া এই মৌলভীবাজার কোন দিন আমাদের ছিল না।