চালু হবে কি মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরী?
ওমর ফারুক নাঈম ::
গত ৪ মাস ধরেই তালা ঝুলছে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরীতে। বই জ্ঞানের প্রতীক, তাই জ্ঞানের আলো জ্বালাবার দরজাটি বন্ধ থাকায় হতাশ অসংখ্য বই প্রেমীরা। আর্থিক সংকটে এখন বন্ধ হওয়ার পথে লাইব্রেরিটি। এরইমধ্যে সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, গ্রন্থাগারিক, সহকারী গ্রন্থাগারিক, পিয়ন ও ঝাড়–দার। সর্বমহলের জ্ঞান পিপাষু মানুষজনও আছেন চরম হতাশায়।
মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের আঙিনায় ১৯৫৬ সালে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার সময়টিতে ছিল লাল টিনের চারচালা বাংলো মতো ঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই লাইব্রেরিটি জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার মানুষকে আকর্ষণ করেছে। তবে দু’বার লাইব্রেরিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একবার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় অনেক দুর্লভ বই হারিয়ে গেছে। পরের বার ১৯৮৪ সালে। সেবার মনু নদের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার শহর প্রায় ৮ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। তলিয়ে যায় লাইব্রেরিটিও। এতে মূল্যবান ও দুর্লভ প্রায় ছয় হাজার বই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি লাইব্রেরির সৈয়দ মুজতবা আলী মিলনায়তনটি সবসময় শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ছোটখাটো অনুষ্ঠানে মুখর ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত মৌলভীবাজার শহরের একমাত্র আলোর আঙিনাটির পাঠচক্রসহ সকল কার্যক্রম বিগত ৪ মাস ধরে পুরো দমে বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- লাইব্রেরীর প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। আর ভিতরের ফ্লোরে পড়ে আছে একটি সাদাকালো পত্রিকার সংখ্যা। দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকার ফলে লাইব্রেরীর প্রধান ফটকের সামনের আঙিনাও জমে আছে শেওলা। প্রতিদিনই এই জ্ঞানের রাজ্যে বই প্রেমি পাঠকরা এসে জ্ঞানের দরজা বন্ধ দেখে চরম ক্ষাভ নিয়ে হতাশ মনে ফিরে যাচ্ছেন। এতে করে অবহেলা ও অযত্মে ইতি মধ্যে নষ্ট হয়েছে পুরানো অনেক দূর্লভ বই।
এমন প্রেক্ষাপটে পাবলিক লাইব্রেরীর অচলবস্থা নিরসনে মৌলভীবাজারে সদ্য যোদানকৃত নবাগত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চান সচেতন মহল। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়েও তিনি পাবলিক লাইব্রেরী অতি শীগ্রই চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই লক্ষে তিনি ৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় সাধারণ সভা ডেকেছেন। সভার আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন “পাবলিক লাইব্রেরী যেহেতু জেলা পরিষদের সম্পত্তি তাই এটি চালুর উদ্যোগ আমি শীগ্রই নেব”।
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন গণমাধ্যমকে বলেন “আমি নতুন ভাবে অফিসের সব কিছু বুঝে নিচ্ছি, আশা করি খুব শীগ্রই পাবলিক লাইব্রেরী চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো”।
উল্লেখ্য, ৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরী। ষাট বছরের বেশি সময় ধরে এ লাইব্রেরী মৌলভীবাজারের মুক্তবুদ্ধি ও শিল্প সাহিত্য চর্চার অনন্য কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভুমিকা পালন করছে যুগ যুগ ধরে। এই জনপদেও হাজার হাজার মানুষের কৈশর, শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবনের নানান সময়ের স্মৃতিঘেরা এই লাইব্রেরীটি আজও অচলবস্থায়। কবে খুলবে এর সম্ভবনার দুয়ার?