টরন্টোতে পিঠা উৎসব
ডিএমবি ডেস্ক::
অডিটোরিয়ামে তিল ধারণের জায়গা ছিলো না। মানুষ আর মানুষ। দর্শক আর দর্শক। ছোট বড়, নারী পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নানান বয়সের দর্শক। সকলেই এসেছেন নাড়ির টানে- দেশিয় পিঠা খাবেন, উৎসবের পর্বগুলো মনভরে উপভোগ করবেন বলে। আনন্দ ভাগাভাগি করা বাঙালিদের ঐতিহ্য- সেটা আবারও প্রমাণিত হলো এ আয়োজনে।
গত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো দেশে বিদেশে আয়োজিত ‘টরন্টো পিঠা উৎসব ও পিঠা প্রতিযোগিতা ২০১৯’।
নগরীর রয়েল কানাডিয়ান লিজিয়ন হলে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরি, বিশেষ অতিথি ছিলেন ডলি বেগম এমপিপি, কবি ইকবাল হাসান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল রুশদ ও কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাঈনুল খান।
বিকেল ৫টায় প্রধান অতিথি কবি আসাদ চৌধুরি পিঠা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসবের কনভেনর রিফফাত নওরিন। তারপর একে একে বিশেষ অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।
শিপ্রা চৌধুরি পরিচালিত আনন্দধারার শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। পুঁথি পাঠ করেন হিমাদ্রী ও মুনিমা। কবিতা আবৃত্তি করেন হোসনে আর জেমি ও দিলারা নাহার বাবু। সংগীত পরিবেশন করেন- লাবণ্য তানজিলা, বীথিকা, মুক্তি প্রসাদ, ফারহানা জয়, শিরিন চৌধুরি ও নাফিয়া উর্মি। মনোমুগ্ধকর নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে তাপস দে-র শিক্ষার্থীরা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শত শত লোক দাঁড়িয়ে থেকে অনুষ্ঠানমালা উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন তানভির, ফারহানা ও ফারিহা রহমান। তিনজনই অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাণবন্ত ছিলেন।
পিঠা প্রতিযোগিতায় ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন টরন্টোর বাঙালি গৃহিনীরা। নানান রঙের, নানান বর্ণের বাহারি পিঠা সাজিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো বাঙালি কমিউনিটিতে। শহরজুড়ে আলোচনা ছিল কে হবেন সেরা পিঠা শিল্পী? অবশেষে সে মহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হলো। মঞ্চে উঠে বিচারকদের দেয়া রায় পাঠ করলেন ‘দেশে বিদেশে’ সম্পাদক নজরুল মিন্টো। এসময় করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা অডিটোরিয়াম।
পিঠা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন সায়কা সাইয়ারা সুপ্তি। তিনি পেয়েছেন ৯৬ পয়েন্ট। ৯৫ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন শায়লা রহমান ও তৃতীয় হয়েছেন লিনা ডি কষ্টা; তিনি পেয়েছেন ৮৭ পয়েন্ট। এছাড়া সেরা দশের মধ্যে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেন- রুবি, সেলিনা নজরুল, ববিতা সেন, মৌসুমি, হৃদয়, রুনা বেগম ও গীতা পাল। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়িনীদেরকে যথাক্রমে ৫০০ ডলার, ৩০০ ডলার ও ২০০ ডলার নগদ পুরষ্কার দেয়া হয়। বাকি সাতজনকে বিভিন্ন পুরষ্কার দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়।
পিঠা শিল্পী নির্বাচনে বিচারকমন্ডলীতে ছিলেন- ব্যারিষ্টার জয়ন্ত সিনহা, রিয়েলটর ও সমাজ সেবক শংকর দে, রান্না বিশেষজ্ঞ হোসেন আহমেদ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মৌসুমি বড়ুয়া ও রান্না বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলম।
সুন্দর ষ্টলের জন্য প্রথম পুরষ্কার পেয়েছেন লিমা (টুনা-টুনির পিঠা), দ্বিতীয় হয়েছেন ফারিয়া আহমেদ (বাংলা কৃষ্টি), এবং তৃতীয় হয়েছেন শাহীন রেজওয়ান (হৃদয় হরণ)।
সুন্দর ষ্টল নির্বাচনে বিচারক মন্ডলীতে ছিলেন- নাট্যজন আহমেদ হোসেন, জাহানারা নাসিমা ও ডলি ভূঁইয়া।
রাফেল ড্রতে পুরষ্কার হিসেবে ৫০ ইঞ্চি টেলিভিশন প্রদান করা হয় কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাঈনুল খানের সৌজন্যে।
সফল এ অনুষ্ঠানের পেছনে যারা কাজ করেছিলেন তারা হলেন- কনভেনর-রিফাত নওরিন, কো-কনভেনর ডলি ভূঁইয়া, কো-কনভেনর-জাহানার নাসিমা, চীফ কো-অর্ডিনেটর- গাজী স্বপন।
অন্যান্য সহযোগিতায় ছিলেন- বাবলু চৌধুরি, তাসমিয়া আফরোজ স্বর্ণা, পলি, তাহমিনা, তরুণা হাসান, মুনিমা রিনি, সামিয়া কবির, ফওয়াদ হাসান, রিদম, পারভিন, লাবনী, তাসমিয়া, জুলি, মাহি, আরজু ও আমাদ।
সাউন্ড ও লাইট-এ ছিলেন রিংকু ও মামুন। ক্যামেরায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী খান ও সৈয়দ মাহবুব।
সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম আজাদ, মহসিন ভূঁইয়া ও রফিকুল টিপু।
অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ফুল দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
এ মহতী উদ্যোগকে সাফল্যমন্ডিত করতে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এসেছিলেন তারা হলেন: খ্যাতনামা ব্যারিষ্টার ওমর জাহিদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ইকবাল রুশদ, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা নুরুল ইসলাম আজাদ, মূলধারার রাজনীতিক মহসিন ভূঁইয়া, বিশিষ্ট ফার্মাসিষ্ট কানন বড়ুয়া (কানন ফার্মেসি), বিশিষ্ট রিয়েলটর মনির ইসলাম, বিশিষ্ট রিয়েলটর রবিন ইসলাম, বিশিষ্ট রিয়েলটর ফারাহ খান, বিশিষ্ট মর্টগেজ এজেন্ট আনিসুর রহমান, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি তমাল দে, বিশিষ্ট একাউন্টেন্ট মনোজ বসাক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন, ট্র্যাভেল ব্যবসায়ি মুজিবুর রহমান, রিংকু সোম।
যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পুরস্কার দিচ্ছেন তারা হলেন: আজাদ কিচেন, মারহাবা, সী ফ্যাশন, কানিজ বুটিক, রেডহট রেষ্টুরেন্ট, এটিএন, রিয়েলটর এবাদুর রহমান, কমিউনিটি নেতা হোসেন আহমেদ।
সবশেষে সফল এ অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপণ, ফুলেল শুভেচ্ছা এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেশে বিদেশে’র পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয়। উদ্যোক্তারা জানান, পরবর্তী পিঠা উৎসব ও পিঠা প্রতিযোগিতা আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে ‘দেশে বিদেশে’ রাঁধুনি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিরাট চমক প্রদান করে। এ পর্যন্ত দু’টি রাঁধুনি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং উভয় প্রতিযোগিতায় টরন্টোর গৃহিনীদের আশা ব্যাঞ্জক অংশগ্রহণ ছিল। আগামী বছরের ৩১শে মে ২০২০ তৃতীয় রাঁধুনি প্রতিযোগিতা এবং আগামী ১৮ অক্টোবর ২০২০ দ্বিতীয় পিঠা উৎসব ও পিঠা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।