করোনাভাইরাস: সুনামগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে তথ্য বিভ্রাট, সমন্বয় নেই
মরণঘাতি ভাইরাস করোনায় সারাদেশের ন্যায় আতঙ্কিত সুনামগঞ্জবাসীও। বাংলাদেশে বসবাসকারী কেউ এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত না হলেও বিদেশফেরতরাই আক্রান্ত এ রোগে আইইডিসিআর বলেছে। তাই সরকার বিদেশ ফেরত নাগরিকদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
কিন্তু সুনামগঞ্জে সম্প্রতি করেণাভাইরাস প্রবণ দেশ ইতালি ও স্পেন থেকে আসা নাগরিকরা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও বিদেশফেরত নাগরিকদের সঠিক কোনো তথ্যও নেই। হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র মতে বিশ্বম্ভরপুরে ১ জন। কিন্তু বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন তার উপজেলারই চারজন হোমকোয়ারেন্টাইনে আছেন।
করোনা ভাইরাস সচেতনতায় উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে নিয়ে কমিটি হলেও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বাদে অন্য কেউ কোনো তথ্যই জানেন না। কমিটির সদস্য বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসিও এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন। এই উপজেলায় কোনো সমন্বয়ও নেই তাদের মধ্যে। তাছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে প্রকাশ্যেই চলাচল করছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে দোয়ারাবাজারে এই সপ্তাহে করোনাভাইরাস প্রবণ দেশ ইতালি থেকে দুজন এবং সুদান থেকে একজন ব্যক্তি এসেছেন। তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাদের পেছনে স্বাস্থ্যকর্মীরা নজরদারিতে আছেন যাতে তারা বাইরে না বেরুতে পারেন। বিদেশফেরতরা যাতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় কুয়েত থেকে একজন, এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরো চারজন এসেছেন। এর মধ্যে তিনজন এসেছেন এই সপ্তাহে এবং একজন এসেছেন এক মাস আগে।
সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বুরহান উদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে জরুরি কারণ ছাড়া দেশে আসা ঠিক না। আমাদের এলাকায় অনেকেই বিদেশ থেকে আসছেন। তারা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন বলে মানুষজন বলছেন।
তাছাড়া এ বিষয়ে সরকারি কমিটি হলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়ই নেই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে গাফিলতির সুযোগ নেই। কারণ যেকোনো মুহূর্তে আমরাও ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছতে পারি। তাই সচেতনতা প্রয়োজন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার উপজেলায় তিনজন হোমকোয়ারেন্টাইনে আছেন। আমরা তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছি এবং তারা যাতে ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে প্রকাশ্যে না আসেন সে জন্য পরিবারের লোকসহ স্থানীয়দেরও সচেতন করেছি। আমাদের লোকজনও নজরদারিতে আছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোরশেদ রুমী বলেন, আমার উপজেলায় চারজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সবাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছেন।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মাহবুবুর বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে কি না তা আমার জানা নেই।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, আমাদের জেলায় জানামতে ৫ জন হোমকোয়ারেনাইনে আছেন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটির নজরদারিতে তারা রয়েছেন।