স্থানীয় যারা নাইকো দুর্নীতির সহযোগী ছিল তাদেরও বিচার দাবি
ছাতক টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে করা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।
অপরদিকে নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের সঙ্গে স্থানীয় যারা নাইকো কেলেংকারির সহযোগী ছিল তাদেরও বিচারের দাবি জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
সোমবার তিনি তার ব্যবহৃত ফেসবুক পেজে এ ব্যাপারে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাঠকের সুবিধার্থে হুবুহু তুলে ধরা হলো।
প্রিয় নবীন প্রজন্ম
মনে আছে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে বিস্ফোরণের কথা? বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের কালে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল তৎকালীন শাসক দল। পরবর্তী সময়ে মামলা হয়েছিল গ্যাস উত্তোলনকারী বহুজাতিক কম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে।
গ্যাস উদগীরণে ২০০-৩০০ ফিট ওপরে আগুন ওঠানামা করে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার কিউবিক ফুট গ্যাস পুড়ার পর এক সময় সে আগুন নিভে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের পাশাপাশি আশপাশের টেংরাটিলাসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষের বসতি, স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জীবন ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে পুরো এলাকা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে তৎকালীন খালেদা-নিজামী সরকার রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছিল।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অবশেষে ব্রিটেনের লন্ডনে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালত (ইকসিড) নাইকোর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। বাংলাদেশকে আট হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ গ্যাস বিস্ফোরণে বিএনপি সরকারের অবহেলা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সোচ্চার ছিল। আমি তখন বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের কারাগারে বন্দি থাকলেও তৎকালীন বিরোধী দলীয় উপনেতা (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ছাতক দোয়ারা বাজারের মানুষের পাশে দাঁড়ান। কারাগারে অন্ধ প্রকোষ্ঠে থেকেও নানাভাবে, কৌশলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিপন্ন এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ সার্বক্ষণিক বিস্ফোরণ উত্তর পরিস্থিতির খোঁজ-খবর ও জড়িতদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। বিচার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সকল শ্রেণী-পেশার সচেতন মানুষও তখন সোচ্চার ছিলেন।
আমরা সরকার গঠন করার পর গুরুত্ব দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য আপসহীনভাবে আইনি লড়াইও চালিয়ে গেছি। যার ফসল আজকে দেশের পক্ষে এ রায়।
উল্লেখ করা যেতে পারে আলোচিত নাইকো দুর্নীতিতে খালেদা জিয়া ছাড়াও এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
অবিলম্বে এদের বিচার নিশ্চিত হোক। পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে যারা এ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির সহযোগী ছিল, যারা এই আগুনে আলু পোড়ে খেয়েছে তাদেরও আলোচিত এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে বিচারের দাবি জানাই।