পুনরুত্থানে যুবক তোমার সংশয় কেন তবে?
কবর
ফারহান আল-হানাফী
গাঁয়ের শেষে খানিক হেঁটেই প্রাচীন বটের নিচে,
চেনা-অচেনা বহুজনে সেথা পাড়ি জমিয়েছে।
বেদনার নীলে বুনো বনসান সবুজে ছড়ায় শোক,
জানিনা কাহার কবরে আজ তিরোহিত চিরসুখ।
ঘুটঘুটে তমসা জোনকি জ্বলে গুরুস্থানের উপর,
ক্রন্দন ধ্বনি কোথা হতে আসে হচ্ছেনা যে ঠাহর।
কথিত আছে ভূত-প্রেতেরা হুংকারে সেথা অমনি,
ক্ষনিকের লাগি মনের দিগন্তে চমকিল অশনি।
কবর কিনারে দাঁড়ায়ে কেহ দেখিনু মৃদু আলোয়,
কাছে গেনু পরে বিঁধিলো কানে মাফ করো দয়াময়।
এ যে দেখছি মোদের ফরিদ!জিজ্ঞাসিনু তারে,
কারে দিয়াছ কবর হেথা সাদা কাফনে মুড়ে?
এই দুই হাতে কাঁধে বয়ে মোর নানারে দিয়াছি কবর,
কেমনে আছে ছোট্ট খোপে কেহ জানেনা খবর।
পথিকের হৃদয় পল্লবিত তাঁর কুরআনের সুরে,
জান্নাতি আভা সারা বাড়ি ভর প্রতি সন্ধ্যা-ভোরে।
মসজিদে যেত সবার আগে ফিরতো সবার শেষে,
প্রভুর প্রিয় বান্দা ছিল সাধারণের বেশে।
দয়াময় খোদা,ক্ষমা করো তাঁরে জান্নাতে দাও ঘর,
দুনিয়ার মতোই রোজ কিয়ামতে উঁচু করো তাঁর স্বর।
কত মানুষে মিশেছি ভবে কত হয়েছে চেনা!
রিক্ত হস্তে বিদায় নিলো রেখে দ্বীনের দেনা।
মাফ করো প্রভু সব মুমিনে মাফ করো মোর চাচা,
অনন্ত প্রেমে গমনিল সে,ছেড়ে দুনিয়ার খাঁচা।
টিনের বেড়া,ছাউনি দিয়ে মসজিদ করলো শুরু,
দানের পয়সা দিয়েই আজ তা ইট পাথরে পুরো।
আম,লিচু আর কাঁঠাল চারা নিজের কাঁধে বয়ে,
খোদার আঙিনায় রোপন করিল শত কষ্ট সয়ে।
সকাল-সন্ধ্যা পানি ঢালিত কচি চারার গায়,
স্মরণে তারই শাখারা গাছের শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ায়।
হাত জোড় করি তার লাগি প্রভু নসীবে রাখ মাফ
মুছে দিও তার ইহজীবনের যত রয়েছে পাপ।
আরশের নিচে ছায়া দিও তারে কঠিন হাশর দিনে,
অনুগ্রহে তব জান্নাতি হলে যাবনা তারে বিনে।
ভুতুড়ে দৃশ্য গুরুস্থানে সন্ধ্যা নামার পরে,
আজও অজানা কত ভীতি তার অপূর্ণ উদরে!
মৃত্যুর দূত সম্মুখ দুয়ারে পাবেনা রেহাই কেহ,
শিশু জোয়ানেরা আজিকার দিনে পাবেনা একটু স্নেহ।
এমনি করিয়াই মৃত্যুসাঁকো পাড়ি দিয়ে পরকালে,
তাগড়া-তরুণ বন্ধু সায়েক মোদের পিছনে ফেলে।
রাঙা বিকেলে ফুটবল মাঠে করেছিল যবে খেলা,
কে জানিত ভাঙ্গিবে তাহার জীবন নামের ভেলা।
ক্লান্ত দেহে ঝাপ দিল সে গোপলা নদীর স্রোতে,
হিংস্রমৃগী ক্ষান্ত হইল মালাকুল মউতে।
দেখেছ কি কভু বপিত বীজে গাছ জন্মেনি ভবে?
পুনরুত্থানে যুবক তোমার সংশয় কেন তবে?
অনন্ত প্রেমে অগ্রজ-অনুজ দিচ্ছে সাঁকো পাড়ি,
আমরা কেন হাত গুটিয়ে দ্বীন ধর্ম ছাড়ি!
ক্ষমা করো প্রভু আছে যত হেথা হীন-কবরবাসী,
জান্নাতি করে কাছে রেখে দিও একটু ভালোবাসি।