কাউকে অপমান করলে অপমানিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে।
তাইসির মাহমুদ.
“বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়” ।বাঙালি সমাজে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবাদের বাস্তবতা দেখা গেলো বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কার্যালয়ে। বরিস জনসনের প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসের অবস্থা ছিলো অনেকটা প্রবাদ বাক্যের মতোই ।প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও যেন আরো ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেছিলেন তিনি । ১০ ড্রাউনিং স্ট্রিটে তিনি তাঁর একক রাজত্ব কায়েমের চেষ্টায় ছিলেন । তাঁর ভয়ে সকল মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা সবসময় তটস্থ থাকতেন।
যুক্তরাজ্যে প্রথমদফা লকডাউন চলাকালে ডমিনিক ৩শ মাইল ড্রাইভ করে লন্ডন থেকে সূদূর ডারাম গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাকে দেখতে । অথচ তখন লকডাউনের কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের একান্ত আপনজনের ফিউনারেলে পর্যন্ত যেতে পারেনি। কিন্তু ডমেনিক তা পেরেছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা।
ডমিনিকের লকডাউন ভঙ্গ করার খবরটি চাউর হয়ে যাওয়ার পর চারদিক থেকেই তাঁর পদত্যাগের দাবী ওঠেছিলো । মূলধারার মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে বিস্তর লেখালেখীও হয় । কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেন নি, কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা ও ঘনিষ্ট বন্ধু। একসময় একসাথেই দু’জন সাংবাদিকতা করেছেন । তাই বরিস জনসন তো আর বন্ধু-উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন না। তাই ডাউনিং স্ট্রিটে বহাল-তবিয়তেই তিনি বহাল থাকলেন।
ডাউনিং স্ট্রিটে তিনি এতই ক্ষমতাবান ছিলেন যে, পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত সাবেক হোম সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদের এক উপদেষ্টার সাথে তিনি চরম দূর্বব্যবহার করেছিলেন। সিকিউরিটি ডেকে অপদস্থ করে তাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
এবার তাকেই অপদস্ত হয়ে ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হচ্ছে। এটাই হচ্ছে প্রকৃতির বিচার। আপনি যখন কাউকে অপমান করবেন, তখন আপনাকেও অপমানিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ১০-ডাউনিং ষ্ট্রিট থেকে ফাইলপত্র গুটিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। আগামী মাস দেড়েক ঘর থেকে কাজ করবেন। এরপর বিদায় ।
কীভাবে পতন হলো অতিমাত্রায় ক্ষমতাবান এই উপদেষ্টার ? কারণ তিনি ক্ষমতা জাহির করতে করতে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পর্যন্ত হাত দিয়ে ফেলেছিলেন । জনসনের বাগদত্তা (স্ত্রী) ক্যারি সাইমন্ডসকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে টেক্ট ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন তার এক বন্ধুর কাছে । সেই টেক্ট ফিরে আসে ক্যারির সাইমন্ডের ফোনে । আর তাতেই বারোটা বেজে যায় ডমিনিকের। বৃটিশ মিডিয়ার ভাষ্য, ডাউনিং স্ট্রিটে সেদিন এক নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো । ক্যারি সাইমন্ড আর ডমিনিকের তুমুল ঝগড়া থামাতে হিমশিম খেতে হয়েছিলো স্বয়ং বরিস জনসনকে ।এর পর যা হওয়ার তাই হলো। ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে হলো ডমিনিককে। তাই আবারও বলতে হয়, “যে যাহা করোরে বান্দা আপনার লাগিয়া”। ******************************************
লেখক পরিচিতি ; বৃটেনে বসবাসরত তাইসির মাহমুদ. একজন সাংবাদিক ও লেখক এবং কমিউনিটির পরিচিত মূখ.