ইফতারি প্রথা – সামজিক ব্যাধি, সমাজ থেকে দুর হোক.।
শেখ জাফর আহমদ.
যুগে যুগে সমাজ বিবর্তনে, অসংখ্য মনিষী ভুমিকা রেখেছেন, যাদেরকে সমাজ প্রবর্তক হিসাবে গণ্য করা হয়। আফ্রিকান বর্নবাদী আন্দোলনের নেতা জনসন ম্যান্ডেলা সারা জীবন সাদা – কালো বৈষম্যের বিরোদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিধবা প্রথার বিরোদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেছেন, বিধবা নারীদের সাদা কাপড় আর সাদা মাঠা জীবনের অবসান ঘটিয়েছেন। বেগম রোকেয়া বাঙালী নারীদের জাগরন সৃষ্টি করেছিলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্টার জন্য সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন।
মুসলমান জাতি হিসাবে আমরা গর্বিত, শ্রেষ্ট ধর্ম আর শ্রেষ্ট নবী পেয়ে আমরা ধন্য। আমাদের প্রিয় নবীর সুন্নাত মোতাবেক, ইফতারের সময় হয় খেজুর দিয়ে/ না হয় পানি পান করেই ইফতার করা সুন্নাত। কোন রাজকীয় পরিবেশে কিংবা ধুম- ধাম করে ইফতার করার মাঝে কোন বাহাদুরী নেই।যার – যার তাওফিক অনুযায়ী ইফতারের ব্যবস্থা করবে এটাই নিয়ম। নবীর জীবন দশায় কিংবা খলিফায়ে রাশেদীন, সাহেবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন এর জবানায় ইফতারি প্রদানের ( শশুর বাড়ি থেকে ইফতার দেওয়া ) কোন প্রথা কিংবা রীতি ছিল এরকম কোন নজির নেই। সুতারাং ইসলাম ধর্মের সাথে ইফতারির কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, আবহমান কাল থেকে আমাদের বাংলাদেশে ( বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে) ইফতারি নামক সামজিক প্রথা চালু হয়ে আসছে।
আচ্ছ ভাবুন তো, যে মেয়েটিকে তার পিতা – মাতা লালন পালন করল, প্রাপ্ত বয়স্ক করল, জীবন চলার উপযুক্ত করল এবং পরিশেষে অন্যের হাতে, অন্যের ঘরে সামাজিক রীতি- নীতি অনুযায়ী তুলে দিল। এই দীর্ঘ পরিক্রমায় একজন অভিভাককে কি পরিমান সংগ্রাম করতে হয়েছে। একজন পিতা তার জীবনের সকল সম্বল দিয়ে চেষ্টা করেন, তার মেয়েকে ঢাক – ঢোল বাজিয়ে আরো সমাজের ৮/১০ টা মেয়ের মত বিবাহ দিতে।
আফসোস বিবাহ দেওয়ার পর বাবার দায়িত্ব কিন্ত শেষ হয় না, শুরু হয় মানসিক যন্ত্রণা। বিয়ের পর থেকেই বর পক্ষের আনা- গোনা / কাপড় -ছোপড় থেকে শুরু করে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনা করা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বৈশাখ জেষ্ট্য মাসের আম – কাটাঁল আর রমযান মাসের ইফতারী যেন একজন পিতার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাজারের সেরা কাটাল আর ফজলী আমের কাচাঁ না দিলে যেন ইজ্জ্বত থাকে না। রমযান মাস এলেই শুরু হয় আসল তান্ডব। রমযানের আগ থেকেই বাবাকে ভাবতে হয়, ইফতারির জন্য আলাদা বাজেট রাখতে হয়, সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে আত্নীয় – স্বজন পাড়া মহল্লার অনেককেই সাথে নিয়ে, নির্দিষ্ট দিন তারিখ ঠিক করে, বর পক্ষের ডিমান্ড অনুযায়ী ইফতারি নিয়ে যেতে হয়। আইটেমের কোন ঘটতি কিংবা কিছুটা কম হলে , মেয়ের উপর শুরু হয় হাসি- টাট্রা, বিদ্রুপ সহ মানসিক নির্যাতন। বুক চাপা কান্না নিয়ে মেয়েকে সামাল দিতে হয় পরিবারের সকল কাজ। বিদায় বেলা মেয়ের মুখ খানি দেখার জন্য বাবা, বার – বার উঁকি দেন, কারন মেয়ের মুখের দিকে তাকালেই বাবা বুঝতে পারবেন, ওর শশুর বাড়ির লোকের সন্তুষ্ট কিনা?
এহেন সামাজিক ব্যাধি যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর চলতে দেওয়া যায় না। এটা একটি সামজিক রোগ, সামাজিক ব্যাধি এটির প্রতিরোধ করা খুবই দরকার। সমাজের বিত্তবানরা যেটাকে সামাজিকতা কিংবা আত্নীয়তার বন্ধন দৃঢ করার কথা বলেন, সেটা কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হত-দরিদ্রদের দের জন্য একটি অভিশাপ, একটি বোঝা একটি মানসিক যন্ত্রণা। এর আশু সমাধান খুবই জরুরী, সারা বাংলায় কয়েক শত/ কয়েক হাজার সমাজ প্রবর্তক গর্জে উঠা সময়ের দাবী।
শেখ জাফর আহমদ ( যুক্তরাজ্য প্রবাসী) লেখক, কলামিষ্ট।