রিক্সাচালকও মানুষ উনাকে সম্মান করা উচিৎ
..তওহীদ ফিতরাত হোসেন.
আমাদের দেশের আইন কি তার সাধারন নাগরিকের নাগরিক অধিকার সংরক্ষন করে ? যদি করে থাকে তবে সবলের হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। গতকাল সোস্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও দেখে খুব ব্যথিত হলাম। একজন রিক্সাচালককে একজন বেশ শক্তিশালী মানুষ পেটাচ্ছে। জীর্ণকায় রিক্সাচালক একসময় অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান এবং সেই বলবান ইতরের মতন তার মা বাবাকে তুলে গালাগাল করছে। আক্রমনকারীর বাড়ী ঢাকার বংশাল , নাম সুলতান আহমদ। তিনি সুলতানী দেখালেন। পাজামা পান্জাবী পরা মাথায় টুপি ও দাড়ি দেখে অনুমান করা যায় তিনি রোজাদার একজন মুসলমান। দাড়ি টুপি বিষয় নয়। বিষয় একজন সবলের দুর্বলের উপর পবিত্র রোজার মাসে মুসলিম প্রধান একটি দেশে বর্বরোচিত অত্যাচার । ইসলাম আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে শিক্ষা দেয় এই মাসে সর্বক্ষেত্রে সংযম পালন করতে। অন্যায় বলপ্রয়োগ করা জঘন্যতম কাজ এবং তা রোজার পবিত্রতায় অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর পুলিশ সক্রিয় হয় এবং সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুলতানকে গ্রেফতারের পর পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমাকে অবাক করেছে। তাদের ভাষ্য হতে জানতে পারি যদি রিক্সাচালক মামলা করেন তবে পুলিশ একশন নেবে এবং আদালতে যাবে নতুবা নয়। রিক্সাচালক ছাড়াই কেন মামলা হবেনা ? তারা এখন ভিকটিমকে খুজছেন তার মতামত ও ইচ্ছে জানতে।
আজকের উন্নত বিশ্বে এমন একটি ভিডিও প্রমাণ থাকার পরও আদালত কেন অপরাধের বিরুদ্ধে স্বপ্রনোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে না বুঝতে পারছিনা। আমরা বারবার বলি আইন শৃক্ষলা রক্ষায় আমরা সফল। আমরা উন্নত বিশ্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। কিন্তু এই বর্বর ঘটনাটি দেখার পর মানুষ হিসাবে আমাদের মানষিকতার কোন উন্নয়ন হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়না। জিডিপি বা জীবন যাত্রার উন্নয়ন কি উন্নয়ন ?
উন্নত বিশ্বে এমন ভিডিওতে যদি কোন অপরাধ ধারন হয় তবে এই আলামতই অপরাধ প্রমান করে অপরাধীকে সাজা দেবে। অপরাধ ও অপরাধীকে নিয়ন্ত্রন করতে এটা রাষ্ট্রীয় বিষয় হওয়া উচিত। ভিডিওটি ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে আদালত নিজ উদ্যেগে ব্যবস্থা নেবেন।
এই ঘটনাটি আমার ভেতরে একধরনের অপরাধবোধের জন্ম দিয়েছে। আমরা একসময় বাসার কাজের লোক বা রিক্সাচালকদের শারীরিক অত্যাচার করতাম। বয়স কম ছিল বিধায় ভাল মন্দ বিবেচনায় হয়তো ছিলনা। বিশেষ করে ইংল্যান্ড এসে রেষ্টুরেন্টের পাচক হিসাবে কাজ করি ও পরবর্তীতে বর্তমান পেশা টেক্সীচালক হিসাবে জীবনবোধই পাল্টে গেছে। ইংল্যান্ডের এই কর্মময় জীবন মানবিক হতে শিক্ষা দিয়েছে। আজ নিজেই লজ্জিত হই নিজের কাছে। কায়মনে ক্ষমা চাই সেই সব মানুষের কাছে যাদের গায়ে ভুল শিক্ষার কারণে হাত তুলেছি। সকল পরিবারের উচিত শিশুকাল হতেই পারিবারিক বলয়ে সঠিক শিক্ষা দেওয়া যাতে সে একজন মানবিক ও আত্মসম্মানবোধের মানুষ হয়। অন্য মানুষকে সম্মান করে সে যে কোন পেশারই হউক।
আমি একজন টেক্সীচালক। বাংলাদেশে একজন রিক্সাচালকের যে কাজ , ইংল্যান্ডের একটি শহরে আমিও সমান কাজ করি। অনেক সময় যাত্রীরা অনেক ধরনের উৎপাত করে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে
একটি ঘটনা ইংল্যান্ডে আমার সাথে ঘটেছিল কয়েক বছর পূর্বে। আমি ভিডিও ধারন করি এবং পুলিশে অভিযোগ করি। পুলিশ আমাকে ও আক্রমনকারী লোকটির সন্ধান বের করে দুজনের বক্তব্য নেয়। স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করে। কিন্তু আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে উভয় পক্ষকে সমন করে। তখন জানতে পারি এমন ঘটনা ক্রাউন কোর্টের বিষয়। সমাজকে কুলষিত করতে পারে এমন কোন ঘটনা ব্যক্তিগত থাকেনা। আমি ক্ষমা করতে পারিনা। সেই আক্রমনকারীর সাজা হয়। আমাকে আদালতে উপস্তিত করা হলেও এজলাসে যেতে হয়নি। এই হল উন্নত বিশ্ব। এটাই উন্নয়ন।
আপনি যে পেশারই হোন আপনার আত্মসম্মান মূখ্য বিষয়। মানুষ হিসাবে সকল পেশার মানুষের আত্মসম্মান থাকে। কেউ যদি মানষিক ভাবে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করে তবে তার মানষিক বিকার হতে পারে। আরেকজনের অত্যাচারে একজন মানুষকে হীনোমন্যতা রোগে আক্রান্ত করবে। আত্মসম্মানহীন মানুষ দেশপ্রেমিক হয়না। হিনোমন্যতা একজন অপরাধীর জন্ম দিতে পারে। নাগরিক হিসাবে ধনী গরীব সকলের অধিকার সম্মানের সাথে বেচে থাকা এবং মানবিক ও উন্নত রাষ্ট হিসাবে রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব তার নাগরিকের সম্মান রক্ষা করা। আমাদের রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে এই বিষয়ে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা দেওয়া হয় কা শুধুমাত্র শ্রেণী উর্ত্তীন হবার শিক্ষা। মানুষ হবার শিক্ষা , আচার ব্যবহার শেখার শিক্ষা আমাদের দেশে দেওয়া হয় বলে মনে হয়না। উন্নত বিশ্ব তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের মনন গঠনে সর্বচ্চো নজর দেয়। জাতির উন্নয়ন শিশুর মনন গঠন ব্যতীত সম্ভব নয়। আজকের শিশু আগামীদিনের রাষ্ট্র পরিচালক।
তওহীদ ফিতরাত হোসেন
ইংল্যান্ড
০৫/০৫/২০২১