বাণীসত্ত্ব ও নন্দনসত্ত্বের যুগলবন্ধনে কবি ও কবিতার অমরত্ব
সোহাগ সিদ্দিকী:
‘যা কিছু আমার বোধের ভেতর তার যথাযথ শৈল্পিক নির্মাণই কবিতা’ বলেছেন জাতিসত্ত্বার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবি তার কবিতায় নির্মাণ করেন সত্যাশ্রয়ী এক নান্দনিক নিসর্গের। যা কিছু সত্য, যা কিছু সুন্দর তাই যেন কবির কলমে প্রসূত হয়।
গল্পকার সাংবাদিক রুদ্র মিজানের লেখার সাথে আমি পূর্বেই পরিচিত। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইপত্র প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘আমিই চাষ করেছি প্রথম প্রেম’। এই গ্রন্থের লেখা প্রতিটি চরণ আমাকে আপ্লুত করেছে। তার কাব্যিক উপমাও চমৎকার। ‘তোমার দেহের কালো তিল/ আমার চোখের জ্যোতি।’ মানুষের মনোজাগতিক চিত্রকল্প কবি এঁকেছেন এভাবে ‘বৃষ্টির শহরে জন্ম আমার/ ছাতাহীন নগরে বসতি তোমার।’
কবি রুদ্র মিজান তার কবিতায় বাণীসত্ত্বে লিখেছেন- ‘জলের নয়, এটা রক্তের ফোটা/ জল শুষে নেয় মৃত্তিকা/ বাষ্প হয়ে যায়/ রক্ত বৃথা যায় না কখনও/ রক্তবীজ কথা বলে অনন্তকাল।’ ঠিক তেমনিভাবে নন্দনসত্ত্ব ও অন্ত:মিলেও কবি সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘শিউলি, বকুল, হাসনা-হেনা নেই পথে/ বহুদূর যেতে হবে ঝড় বাদল এই রথে/ আমি পথ না চেনেই পা বাড়ালাম ফাঁদে/ পথিকের কি মূল্য আছে অন্ধগলির কাঁধে?’
কবিতার শব্দের আগুনে পুড়ে যাক অন্ধকার। কবি তাই পৃথিবীর সর্বশেষ শুদ্ধজন! কবি রুদ্র মিজানের ‘আমিই চাষ করেছি প্রথম প্রেম’ পাঠ করে আশাকরি পাঠক একজন সম্ভাবনাময় কবিকে জানবেন। অনেকেই নতুন করে তার কাব্য প্রতিভার ভক্ত হবেন। আমি তার সার্বিক কুশল কামনা করি।
শেষ করছি কবি হেলাল হাফিজের উদ্ধৃত্তি দিয়ে ‘কবির জীবন খেয়েই কবিতা জীবন ধারণ করে।’ কবিতা যেন জীবন ও ইতিহাসের আরশি। তাই মহাকাল কবিকে ভুলে না। মহাকালেই কবির বসবাস।