আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করলেন খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খুনি সরকারের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। এই সরকারের পতন ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আন্দোলন করতে হবে। হয়তো এ জন্য আরও কিছু প্রাণহানি হবে, জানমালের ক্ষতি হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে এইটুকু ক্ষতি মেনে নিতে হবে।’
আজ শনিবার বিকেলে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পশ্চিম গোবিন্দল রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক শোক সমাবেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ডাকা হরতালে সিঙ্গাইরের গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার গ্রামবাসী নিহত হন। এ ছাড়া নারী-পুরুষ-শিশু, পুলিশসহ গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়।
ওই সহিংসতার ঘটনায় নিহত চারজনের পরিবারের সদস্য ও আহত ১৬ জনের সঙ্গে সমাবেশের আগে কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও আহত লোকজনকে আর্থিক সহায়তাও দেন তিনি। একই সঙ্গে ওই ঘটনার নিন্দা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বিচার
সহিংসতার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, এই গণহত্যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে। বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল করে প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে হাজির করা হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আল্লার হুকুম ছাড়া যেমন গাছের পাতাও নাড়ে না, তেমনি প্রশাসনের কোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া হয় না।’
সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গুলি বন্ধ করুন। নয়তো এর প্রতিদান দিতে হবে। জনগণ বসে বসে মার খাবে, গুলি খাবে, আর মসনদে বসে আপনারা উপভোগ করবেন, তা হবে না।’
ত্বকী হত্যা:
খালেদা জিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা, সেখানকার গডফাদার শামীম ওসমান হত্যা করেছে ত্বকীকে। তিনি বলেন, ত্বকীর বাবা মেয়র নির্বাচনের সময় আইভির জন্য কাজ করেছেন। এ জন্যই ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখনো কেন শামীম ওসমান বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি?’
শাহবাগ:
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার তাদের অপকর্ম ঢাকতে পুলিশ পাহারায় ছাত্র-যুবকের নাম দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে। এখানে যে ছাত্র-যুবকদের কথা বলা হচ্ছে, তারা যুবকদের অংশ নয়, সরকারের অংশ। এরা দেশের ক্ষতি করছে।
পদ্মা সেতু:
পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ প্রস্তাবকে ‘ভাঁওতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। তাদের কেউ টাকা দেবে না।
ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল:
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এই ক্যাপসুল এনেছেন। সেগুলো খেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে। অসুস্থ হচ্ছে। সরকার গুলি করে, না খাইয়ে, ওষুধ খাইয়ে মানুষ মারছে।
খালেদা জিয়া আজ বিকেল চারটার দিকে ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ গিয়ে পৌঁছেন। সেখানে তাঁর আরও একটি সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জ সফর করেন খালেদা জিয়া। বিকেলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালীমান্দ্রা কালীমন্দির পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। ২ মার্চ রাতে এই মন্দিরে কে বা কারা আগুন দেয় ও কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর করে। খালেদা জিয়া বিকেলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালীমান্দ্রা কালীমন্দিরসংলগ্ন মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন।