‘এ এক বিরল ভালোবাসা’ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণী অবমুক্ত

জালাল আহমদ : এ এক বিরল ভালোবাসা। মানুষ যেখানে প্রতিনিয়ত নিজের স্বার্থে ছুটে বেড়ায়, নিজের সম্পদ বাড়াতে ব্যসত্ম থাকে সেখানে ষাটোর্ধ্ব শ্রীমঙ্গলের সিতেশ বাবু ছুটছেন পশুপাখি ও জীবজন্তুর সহায়তায়। মঙ্গলবার বিকেলে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে সুস্থ হওয়া বিভিন্ন জাতের পাখি অবমুক্তের সময় এসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এসসিসি ব্যাংক ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও নুরম্নল আমীন এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিসেস নুরম্নল আমীন, পশুপাখিপ্রেমী সিতেশ রঞ্জন দেব ও এনসিসি ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখা ব্যবস্থাপক অজয় দেব।বিভিন্ন জায়গায় লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়া পাখিগুলো উদ্ধারের পর সেবা-শুশ্রম্নষা শেষে এদের অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্ত প্রাণীগুলোর মধ্যে ছিল সাদা বক, কালিমসহ বিভিন্ন জাতের পাখি। প্রাণীগুলো অবমুক্তের পর তারা বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ঘুরে দেখার সময় মঙ্গলবার বিকেলে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার থেকে উদ্ধার করে আনা হয় ২টি লক্ষ্মীপেঁচার বাচ্চা। সরকারিভাবে গ্রোথ সেন্টার করার কারণে কমলগঞ্জ উপজেলার বহু পুরানো একটি বটবৃক্ষের গাছ কেটে ফেলায় লক্ষ্মীপেঁচা দু’টি বাসা হারায়। মুন্সীবাজার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমএলএসএস চম্পা বেগমের হাতে ধরা পড়ে লক্ষ্মীপেঁচা দু’টি। এনসিসি ব্যাংক চেয়ারম্যান এই প্রাণীটি দেখে আপস্নুত হয়ে যান। এ সময় তিনি কয়েকমাস আগে তার প্রতিষ্ঠান এনবিব এই বন্যপ্রাণীগুলোর জন্য বেশ আর্থিক সহায়তা যথার্থ হয়েছে বলে জানান এবং আরো সহায়তারও আশ্বাস দেন। তিনি সিতেশ রঞ্জন দেবকে তার এ মহৎ প্রয়াস চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মেছোবাঘসহ নানা জাতের বণ্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর এসব বণ্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়। লাউয়াছড়া বনের জানকীছড়ায় প্রাণীগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করেন জেলা প্রশাসক কামরম্নল হাসান। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে মানুষের হাতে ধরা পড়ে এ সেবা ফাউন্ডেশনে সেবা-যত্ন শেষে মঙ্গলবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে মোট ১৮টি প্রাণী অবমুক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকাশ কানিত্ম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বণ্যপ্রাণী) মাহবুবুর রহমান, প্রাণীপ্রেমী সীতেশ রঞ্জন দেব ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অবমুক্ত করা প্রাণীর মাঝে ছিল ২ টি মেছোবাঘ, ৩ টি গন্ধগকুল, ১টি অজগর সাপ, ৩ টি বন বিড়াল, ১ টি গুঁইসাপ, ১ টি শিয়াল, ২ টি লক্ষ্মীপেঁচা, ১ টি বানর এবং ৪টি অতিথি পাখি।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রাণীবিদ সীতেশ রঞ্জন দেব জানান, বন্যপ্রাণী যখন লোকালয়ে বেরিয়ে আসে তখন মানুষের তাড়া খেয়ে ও নানা কারণে আহত হয়ে ধরা পড়ে। এসব প্রাণী তার সেবাশ্রমে সেবা যত্ন করে পরবর্তীতে আবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।