নিষ্পাপ শিশুটিকে কেন হত্যা করলেন?

তানভীর মুহামঞ্চদ ত্বকী হত্যায় সরাসরি দায়ী করা হলো শামীম ওসমান ও তাঁর পরিবারকে। এই পরিবার মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
তানভীর হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থল চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এই অভিযোগ করা হয়। তানভীরের বাবা রফিউর রাব্বি অভিযোগ করেন, বাসভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ করাসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তানভীরকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তানভীর হত্যায় জড়িত ৮-১০ জন ইতিমধ্যে ওই পরিবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহযোগিতায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ছেড়েছে।’
সমাবেশের প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি কেন সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে ওই নিষ্পাপ শিশুটিকে হত্যা করলেন? তার বাবা নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছেন বলে? যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনি আমাকে হত্যা করুন। আমি জানি, আপনি আমাকে সামনে এসে হত্যা করতে পারবেন না। আপনি অসম্ভব রকমের একজন কাপুরুষ।’
গতকাল বিকেল তিনটা থেকেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো প্রাঙ্গণ জনমানুষের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে। শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা বিভিন্ন ব্যানারে ছেয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ স্লোগান ও বক্তব্যে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
তানভীর হত্যার ঘটনায় গত কয়েক দিনে ‘বিশেষ পরিবারকে’ সন্দেহ করা হচ্ছিল। গতকালের সমাবেশে এ হত্যাকাণ্ডে শামীম ওসমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়ী করা হলো।
রফিউর রাব্বি সমাবেশে বলেন, ‘তানভীরকে জামায়াত-শিবির হত্যা করেনি। তাকে হত্যা করেছে সেই প্রতিপক্ষ, যাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। বাসভাড়া বাড়ানোয় আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমি ওই সময় বাসমালিকদের বলেছিলাম, শামীম ওসমান ও নাসিম ওসমানকে আপনারা চাঁদা না দিয়ে বাসভাড়া কমান।’ শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে রাব্বি বলেন, ‘আপনি জামায়াত-শিবিরের জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। তানভীর হত্যায় আপনি জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে লড়তে বলছেন। অথচ ১৯৯২ সালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নির্দেশে আমরা নারায়ণগঞ্জে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করি। আপনি ২২ জনের কমিটিতে আসেননি। আজ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের কারও গায়ে ফুলের টোকা পর্যন্ত দেননি।’
মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী তাঁর বক্তব্যের মাঝেই ‘শামীম ওসমানের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন। সমাবেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে তিনি শামীম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। আইভী বলেন, ‘৩০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জবাসী জিমিঞ্চ। আর কত দিন জিমিঞ্চ থাকব?’ তিনি বলেন, শামীম ওসমান অনেক মেধাবীকে অস্ত্র হাতে তুলে দিয়ে নষ্ট করেছেন।
সেলিনা হায়াৎ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে আপনি কী বলেছেন জানি না। যদি বলে থাকেন, তাহলে বলব, আপনি নারায়ণগঞ্জের দিকে তাকাবেন না। আপনার এলাকায় জামায়াত-শিবিরের রাজত্ব। আপনার এলাকা সামাল দিন।’
সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু ও সহসভাপতি ভবানীশ্বর রায়, জেলা খেলাঘরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী বক্তব্য দেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা ন্যাপের সভাপতি আওলাদ হোসেন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।