বিশ্বনাথে ২০৮ জন জামায়াত-শিবির নেতাকে আসামি করে পুলিশের দুটি মামলা : নিহত জামায়াতকর্মীর দাফন সম্পন্ন
মোহাম্মদ আলী শিপন,বিশ্বনাথ থেকে : বিশ্বনাথে গত বুধবার হরতাল চলাকালে জামায়াত-পুলিশের সংর্ঘষের নিহত হন জামায়াত কর্মী গোলাম রব্বানী। সংর্ঘষে পুলিশ-জামায়াত নেতাকর্মীসহ ২০জন আহত হয়। এঘটনায় বুধবার রাতে থানা পুলিশ বাদি হয়ে দ্রুত বিচার আইনে একটি ও সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জল। উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন সিদ্দিকীকে দুটি মামলায় প্রধান আসামী করে জামায়াত-শিবিরের ৩৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ও ১৭০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিকে আসামি করা হয়।মামলার আসামিরা হলেন-উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী এইচ.এম. আখতার ফারুক (৪৫), সহকারি সেক্রেটারী মতিউর রহমান, ফখরুল ইসলাম খান, সিলেট মহানগর জামায়াতের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, নিহত জামায়াতকর্মী গোলাম রব্বানী, ছাত্রশিবির সভাপতি জহির আহমদ, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবদুল মতিন, জামায়াত নেতা মজিদ, তৈয়বুর রহমান, শামীম আহমদ, ফয়জুল, আবদুল কাদির, ফিরোজ মিয়া, কয়েছ প্রমূখ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, জামায়াত-শিবির সশস্ত্র সন্ত্রাসী মুখোঁশ, হেমলেট পরিধান করে হাতে দেশীয় অস্ত্র,দা, লাঠি, সোঠা, কাটা রাইফেল, বন্ধুক পাইপগানসহ সজ্জিত হয়ে অস্ত্রের ধাপট দেখিয়ে বিশ্বনাথ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিদ্যুৎ অফিসে হামলার উদ্যোগ গ্রহন করে। এসময় জমায়েত অবৈধ জনতাকে রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার জন্য ও ঘটনাস্থল থেকে ছত্রভঙ্গ হওয়ার জন্য (মামালা বাদি) অনুরোধ করেন। উৎশৃঙ্খল জনতা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করলে তাদের লাঠি চার্জ করা হয়। বাধ্য হয়ে ধাক্ষা কারি জনতাকে নিবৃত্ত করার জন্য সঙ্গীয়, র্ফোস ক/% ৭৫০ বাবুল গৌর এর নামে ইস্যুকৃত গান হইতে ০৭ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষোপ করানো হয়। উচ্ছংখল জনতা ছত্রভঙ্গ না হইয়া আসামি নিজামউদ্দিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আরোও উত্তেজিত হয়ে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দা, লাঠি, রড ইত্যাদি নিয়ে পুলিশকে হত্যা ও তাদের অস্ত্রগুলি লুটের জন্য পুলিশের উপর চড়াও হয় এবং এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে ও ইট পাটকেল নিক্ষোপ করতে থাকে। আসামি মোবশ্বির আলী হত্যার উদ্দেশ্যে তাহাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়া যথাক্রমে ক/ আবু মুছা,ক/ কবির হোসেনকে আঘাত করলে তারা মাঠিতে লুটে পড়ে। আক্রমনকারিদের মধ্যে আসামি আবদুল মজিদ, মতিউর রহমান, শামীম, ফিরোজ গং আহত ক/৬৬০ আবু মুছার অস্ত্র ছিনাইয়া নেওয়ার জন্য টানাটানি শুরু করে। আসামিদের মধ্যে যথাক্রমে আখতার ফারুক, আফজাল তাদের হাতে থাকা কাটা রাইফেল ও বন্ধুক দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এইরুপ অবস্থায় পুলিশকে আসন্ন মুত্যুর হাত ইহতে রক্ষার জন্য নিমিত্তে ফাঁকা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও রাইফেলের ফাঁকা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। পুলিশকে আক্রমন কালে আসামিদের দ্বারা পুলিশের উপর নিক্ষিপ্ত গুলি এবং এলোপাতাড়ি আঘাতের কয়েকটি লক্ষ ভ্রষ্ট হয়ে আসামি রব্বানীর মাথায় এবং রুমেলের হাতে লাগলে তারা জখম হয়। বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, থানায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহতের জানাযা ঃ নিহত জামায়াত কর্মী গোলাম রব্বানীর প্রথম জানাযা সকাল ১১টায় সিলেট আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্টিত হয়। পরে তার লাশ বিশ্বনাথ উপজেলার পাকিছিরি গ্রামে নিয়ে আসা হয়। বিকেল ২টায় দ্বিতীয় জানাযার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজে জামায়াত-শিবিরসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ঢল নেমেছিল।
এলাকায় শোকের মাতন ঃ নিহত গোলাম রব্বানীর লাশ পাকিছিরি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে এক হদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনার সৃষ্ঠি হয়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। লাশটি এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকে তার বাড়িতে আত্নীয়-স্বজনসহ এলাকার শতশত মানুষ ভিড় করেন। নিহতের পরিবার-আত্নীয় স্বজনের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। তাদের কান্না কেউ যেন থামাতে পারছেনা। নিহতের পরিবারের কান্না দেখে এলাকার অনেকেই নিরবে কাঁদতে দেখা যায়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহতের পিতা-মাতা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলাবাসি আতংকে ঃ বিশ্বনাথে গত ২৩ এপ্রিল নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে সহিংতার ঘটনায় তিন যুবক নিহত হয়। এঘটনার বেশ কিছুদিন এলাকাবাসি আতংকের মধ্যে দিয়ে জীবন-যাপন করছিলেন। এর রেশ-কাটতে না কাটতেই ফের এক অজানা আতংকের মধ্যে রয়েছেন উপজেলাবাসি। আশংঙ্খা করছেন ফের সংর্ঘষের। ফলে ভয়ে অনেকেই বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
গ্রেফতার আতংক ঃ বিশ্বনাথে জামায়াত-পুলিশের সংর্ঘষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার আতংকে রয়েছেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। নিহত জামায়াত কর্মী গোলাম রব্বানীর জানাযার নামাজে মামলার আসামি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে নামাজ শেষে তারা গাঁ-ডাকা দেন। তবে গতকাল বৃহম্পতিবার এরির্পোট লেখা পর্যন্ত মামলার কোন আসামি কে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী পরিবার পরিজন রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এদিকে নিহত গোলাম রব্বানীর পাখিছিরি গ্রামের গ্রেফতার আতংকে বেশ কয়েকটি বাড়িতে পুরুষ শূণ্য রয়েছে। ফলে বাড়ির নারীরা রয়েছেন বিপাকে।