কুলাউড়ায় বিদেশি অনুদানের মসজিদ নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা ও চাঁদা দাবির অভিযোগ!
মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গারদ বাজারে বিদেশি অনুদানে নির্মিত একটি মসজিদ নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোক্তা কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল মুকিত প্রতিকার চেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। তদনত্মপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদনটি কুলাউড়া থানায় প্রেরণ করলে এসআই মিজানকে তদনত্মভার দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগে প্রবাসী আব্দুল মুকিত উলেস্নখ করেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে দুবাই শহরে থাকায় ২০১১ সালে তাঁর মালিক (কফিল) বাংলাদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য তার ওপর দায়িত্ব প্রদান করে। তিনি কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের প্রত্যনত্ম অঞ্চল ফটিগুলি (গারদ) জামে মসজিদকে নির্বাচন করে পুরাতন ওই মসজিদ ভেঙ্গে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে নতুন মসজিদ তৈরির কাজ শুরম্ন করেন। মসজিদের ভিত্তিসহ প্রাথমিক কাজ কিছুটা কাজ শুরম্ন হওয়ার পর ওই এলাকার মৃত আমজদ উলস্নাহ’র ছেলে মছদ্দর আলী বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করতে থাকেন। মসজিদ নির্মাণের ফান্ড মছদ্দর আলী তার কাছে নেয়ার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকেন। মসজিদের ফান্ড মছদ্দর আলীর হাতে দিতে অস্বীকৃতি জানালে মছদ্দর আলী মসজিদের নির্মাণ কাজে বিভিন্নভাবে বাধা দিতে থাকেন। মছদ্দর আলী ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশ মোতাবেক ১১ ফুট ছাদ ঢালাইয়ে বাধা দিয়ে ১০ ফুট ছাদ ঢালাই দিতে বাধ্য করেন। মসজিদের ল্যাট্রিন, প্রস্রাবখানা ও ওজুখানা নির্মাণেও তিনি বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। এ ক্ষেত্রে ল্যাট্রিনের সেফটি ট্যাংকের কোন ওভার ফু্ল পাইপ দিতে দেননি। এতে নির্মাণের তিন মাসের মাথায় সেফটি ট্যাংকে ফাটল দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। তাছাড়া মসজিদের নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য মসজিদের পুকুর থেকে পানি ব্যবহার করতে মছদ্দর আলী বাধা দেন। মসজিদের স্বার্থে এলাকার সচেতন লোকদের নিয়ে মছদ্দর আলীর বাধাকে উপেক্ষা করে এক প্রকার ঝুঁকি নিয়েই পানি ব্যবহার করেছেন আব্দুল মুকিত। মসজিদের নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরম্ন হওয়ায় পর এখন কেন কাজে বাধা দিচ্ছেন-এ প্রশ্নের জবাবে মছদ্দর আলী উদ্যোক্তা আব্দুল মুকিতকে বলেন, এই মসজিদের জায়গা আমার, আমি এই এলাকার বিশিষ্টজন, আমার কথা ছাড়া কোন কাজ হবে না। সুতরাং আপনি যদি মসজিদের কাজ করতে চান তবে পুরো ফান্ড আমার হাতে দিয়ে দেন। আমিই কাজ করাব নতুবা আপনি আমাকে ১ লাখ টাকা দিয়ে দেন তাহলে আমি আপনার কাজে কোন বাধা দেবনা। আপনি যেভাবে চান সেভাবে কাজ হবে। মছদ্দর আলীর এই প্রসত্মাবে রাজি না হওয়ায় মসজিদের নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণে বাধা দেয়ার ফলে দেয়াল নির্মাণ হচ্ছে না। এছাড়াও মছদ্দর আলী ফোনে বার বার এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করতে থাকেন। টাকা না দিলে তিনি দেয়াল নির্মাণ করতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। মছদ্দর আলী নতুন তৈরিকৃত টয়লেট তালাবদ্ধ করে এর পাশে একটি ছোটখাট ল্যাট্রিন তৈরি করেন। তাছাড়া মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন দিতেও তিনি বাধা দিচ্ছেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন তার হাতে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এসব কথা না শুনায় বর্তমানে মসজিদের মুয়াজ্জিনকে তিনি বিদায় করে দেয়ায় মসজিদটিতে ঠিকমত এখন আযান ও নামাজ না হওয়ায় মুসলিরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছেন। আব্দুল মুকিত এ ব্যাপারে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস শহিদ বাবুলকে মৌখিকভাবে জানান। মসজিদ নির্মাণ শেষ করে এর ভিডিও চিত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য দুবাইয়ের কফিল বলে দেওয়ায় এখন আব্দুল মুকিত পড়েছেন বিপাকে। কারণ, মসজিদের বাকী অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে না পারায় ভিডিও চিত্র ধারণ করা যাচ্ছেনা। আব্দুল মুকিত জানান, তিনি মছদ্দর আলীর কথায় কর্ণপাত না করে তার কফিলের নির্দেশ মতো নিজ দায়িত্বে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা খরচ করে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।
এ ব্যাপারে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস শহিদ বাবুল জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি একবার একটি কমিটি করে সমাধান করে দিয়েছিলাম, শেষে তারা সেটা মানেনি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমি বিষয়টি সমাধান করে দেবো। থানা পুলিশের এসআই মিজান এ ব্যাপারে জানান, নানা প্রতিকুলতায় বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। আসা করি দু’একদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। অভিযুক্ত মছদ্দর আলী তার উপর আনীত চাঁদাবাজিসহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, চেয়ারম্যান সাব একটি বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার কথা থাকলে তিনি তা করেননি। আমি বলেছি একটি কমিটি করে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য।