ফের আতংকে বিশ্বনাথবাসি : সংঘাতের আশংকা

মোহাম্মদ আলী শিপন, বিশ্বনাথ (সিলেট) : সিলেটের বিশ্বনাথে গত বছরের ২৩ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে সহিংসতার ঘটনায় মনোয়ার,সেলিম ও জাকির নামের তিন যুবক নিহত হন। এঘটনার পরপরই উপজেলাবাসি আতংকের মধ্যে দিয়ে কয়েকটি মাস পার করেন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত বুধবার জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবির সংর্ঘষে গোলাম রব্বানী নামের জামায়াতকর্মী নিহত হন। ওই সংর্ঘষের ঘটনায় বুধবার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ্য করে ও ১৭০ জনকে অজ্ঞাতানা রেখে দুটি মামলা করে থানা পুলিশ। মামলায় ২০৮ জন আসামি হলেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কয়েকশত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। ফলে এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে পুরুষ শূণ্য রয়েছে বলে জানাগেছে। বিশ্বনাথে জামায়াতকর্মী গোলাম রব্বানী নিহতের ঘটনায় সিলেট বিভাগে আগামীকাল রবিবার আধাঁ বেলা হরতাল আহবান করেছে জামায়াত। ফলে ফের আবারো এক অজানা আতংকের মধ্যে রয়েছেন উপজেলাবাসি। পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠের মধ্যে।
এদিকে, সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় নিহত জামায়াতকর্মী গোলাম রব্বানী, তার দাদা অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল তৈয়বুর রহমান, লামাকাজি ইউপি বিএনপির সভাপতি রইছ উদ্দিন, কারিকোনা গ্রামের বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবদুল মতিন, রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিফত আলীসহ নিরিহ লোকজনকে আসামি করায় এলাকায় পুলিশের মামলা নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এনিয়ে সবত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
অপরদিকে, ঘন ঘন হরতাল ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি ও সহিংসতার ঘটনায় হাট বাজার মানুষের উপস্থিত কম। ফলে এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্টানে।
জানাযায়, গত বছরের ২৩ এপ্রিল নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে সহিংসতার ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পর চরম আতংকে বসবাস করে আসছিলেন উপজেলাবাসি। গত বুধবার জামায়াতের ডাকা হরতাল চলাকালে পুলিশ-জামায়াত সংর্ঘষের গুলিবৃদ্ধি হয়ে নিহত জামায়াতকর্মী গোলাম রব্বানী। আবার আগামীকাল রবিবার আঁধা বেলা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। বুধবার উপজেলা সদরের দূর্গাপুরে ঘটে যায় ঘটনায় তাদের মধ্যে দেখা দিয়ে এক অজানা আতংকে। আবারো কি সেই দিনের ঘটনার দিকে এগুচ্ছে বিশ্বনাথ। এমন অজানা শংঙ্খায় ফের তাড়া করছে উপজেলাবাসীকে। জামায়াত-কর্মী নিহতের প্রতিবাদে হরতাল আহবান করায় চরম আতংকে রয়েছেন বিশ্বনাথের মানুষ। সহিংসতার ঘটনার পুণরাভিত্তি চান না কেউ। ঘন ঘন হরতাল, রাজনৈতিক দলগুলোর নানান কর্মসূচির ফলে সংঘাতের আশংকায় রয়েছে উপজেলাবাসি।
খোজঁ নিয়ে জানাযায়,গত বুধবার সংর্ঘষের নিহতের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ২০৮ জনকে আসামি করে পুলিশ দুটি মামলা করে। মামলার আসামি ছাড়াও গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এলাকার কয়েক শত মানুষ। যার ফলে ওই বাড়ির নারীরা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠের মধ্যে। পুরুষ শূণ্য বাড়িগুলোতে নারীর রয়েছে বিপাকে। কয়েকটি বাড়িতে পুরুষ থাকলেও তারা ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। উপজেলার বেশির ভাগ হাট-বাজারে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্টানে তেমন বেচা-বিক্রি হচ্ছেনা। উপজেলা জুড়ে এখন এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। উপজেলা সদরের বাসা-বাড়ি লোকজন রয়েছেন সব চেয়ে বেশি আতংকে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের রয়েছেন চরম আতংকে ভয় অনেকই বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।
অটোরিক্সা চালক মনির মিয়া বলেন, গত দুইদিন ধরে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। আবার রবিবার আঁধা বেলা হরতাল। আতংকের মধ্যে রয়েছি।
স্কুলগামী ছাত্র রিপন মিয়া বলেন, ভয়ের মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। বিশ্বনাথ এখন আতংকের জনপথে রুপ নিয়েছে।
ভাসমান ব্যবসায়ী কবির আহমদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বলেন, হরতাল আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারা। আমরা সংঘাত চাইনা শান্তি চাই।
মুদি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ভয়ের মধ্য দোকান কোঠা খুলি। দোকানে মাল থাকলেও ক্রেতা শূন্য। মানুষজন বাজারে খুবই কম। আগের মত বেচা-কেনা হয় না। রবিবার দোকান বন্ধ থাকবে।
সবজি বিক্রতা আমির আলী বলেন, গত কয়েক দিন ধরে থেকে তেমনি বেচা-কেনা নেই। অনেক মাল নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে। এভাবে চললে প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।
বিশ্বনাথ থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে কোন ধরণের নাশকতা এড়াতে, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ব্যবস্থা নেয়া হবে।