ফোরিডায় বাঙালি-মূলধারা মিলে স্মৃতিময় বাংলাফেস্ট মিলনমেলা

নাজমুল েহাসাইন, িমলান থেেক : ফোরিডা :‘ফোর্ট মায়ার’, অপেক্ষাকৃত ছোট ট্যুরিস্ট সিটি। হাতে গুনা বাংলাদেশী পরিবারের বসবাস। কেউ বলেন প্রায় ২শ, কেউ বলেন দেড় শতাধিক, আবার কেউবা বলেন শতাধিক। প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং প্রফেশনাল। কেউ ডাক্তার, কেউ ফার্মাসিস্ট। ব্যবসায়ীও আছেন, তবে কম। কাজ কর্র্মের বাইরে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত নিজেদের শেকড়ের সন্ধানে। নিজেদের হাজারো বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে লালন-পালন ও চর্চায় ব্যস্ত সবাই। শুধু তাই নয়, নিজেদের নিজস্বতাকে ধরে রেখে তা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি বিদেশীদেরও আকৃষ্ট করার কাজে ব্যস্ত তারা। অত্যন্ত সুসংগঠতিভাবে এই কাজটি করে যাচ্ছেন ফোর্টমায়ারের বাংলাদেশীদের নিয়ে গড়া ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান সোসাইটি অব সাউথওয়েস্ট ফোরিডা’ নামের সংগঠনটির কর্মকর্তারা। তাদের উদ্যোগে বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা অনুষ্ঠান হলেও সবচেয়ে বড় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা ফেস্ট’ নামে। যেখানে নিজেদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় নতুন প্রজন্মের সাথে, তারা যাতে নিজেদের পূর্ব প্রজন্মের শেকড়কে চেনে। পাশাপাশি বাঙালি জাতির হাজারো বছরের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়া হয় এ দেশের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মাঝেও। ২০১২ থেকে শুরু হওয়া বাংলা ফেস্ট নামের দ্বিতীয় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ মার্চ ফোরিডার ‘ফোর্ট মায়ার’ শহরের এলায়েন্স ফর দ্যা আর্ট প্রাঙ্গণে। ২০১২ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বাংলাফেস্ট। ১১ মাসের মাথায় ২০১৩ তে অনুষ্ঠিত হল দ্বিতীয় আয়োজন। সে জন্যই হয়তো অনুষ্ঠানের অতিথি স্থানীয় মেয়র র্যানডল পি হ্যান্ডার্সন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না দ্বিতীয় আয়োজনটির কথা শুনে। খোলা আকাশের নীচে চমৎকার আবহাওয়ায় অনুষ্ঠিত উৎসবে গান-বাজনা, আনন্দ-উৎসব, খাওয়া-দাওয়া, কেনা-কাটা, হৈ -হুল্লোড়- কোন কিছুরই কমতি ছিলনা। বাঙালী সংস্কৃতির এই আয়োজনে নিবিড় হয়ে মিলে মিশে একাকার হয়েছিলেন শুধু আমেরিকানরাই নয় নানা ধর্মের, নানা গোষ্ঠীর, নানা বর্ণের মানুষও। কেউ মূলমঞ্চে চলমান বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে উপভোগ করেছেন, কেউ উৎসব প্রাঙ্গনে স্থাপিত স্টল থেকে বাঙালি খাবারের মজা লুটেছেন আবার কেউবা বিভিন্ন পোষাক ও সাজ গোছের স্টল থেকে কিনেছেন শাড়ী -গয়নাসহ রমনীয় সাজের নানা উপকরণ। অনিভা ও রুমির চমৎকার ও প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে। ছোট ছোট শিশু কিশোরের চমৎকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার পর আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আযম স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন। তিনি উপস্থিতির জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি -ইতিহাস -ঐতিহ্যে জড়িয়ে আছে দেশের জন্য আমাদের ভালবাসা। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই সংস্কৃতিকে ধারণ করে, লালন-পালন ও চর্চা করে তারাও এগিয়ে যাক। আহমেদ আযম বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে আমাদের চেষ্টা থাকবে -সবাইকে বাংলার ফুড কালচার, কবিতা, সঙ্গীত ও নৃত্যে তথা সংস্কৃতি- ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া। প্রেসিডেন্টের স্বাগতিক বক্তব্যের পর শুরু হয়ে যায় মূলমঞ্চে নানা বৈচিত্রময় পরিবেশনা। দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, নজরুল সঙ্গীতসহ বিভিন্ন গানের সাথে শুরু হয় নানা রংয়ে, নানা সাজের নৃত্য, সাথে ফ্যাশন শো। মাঝে অতিথি হিসেবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ফোরিডার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ হ্যাদার ফিটজেনহ্যাগেন| এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’ গানের সাথে কিশোর কিশোরীদের ফ্যাশন শো দারুনভাবে আকৃষ্ট করে উপস্থিত সবাইকে। নৃত্য, অনিভা জামানের আধুনিক নৃত্য পরিবেশনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। শুরু হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্ব। এই পর্ব পরিচালনা ও অতিথিদের পরিচিতি তুলে ধরেন বাংলাফেস্ট ’২০১৩ এর কনভেনর ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ। প্রথমেই তিনি এই উৎসব আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেন। তিনি বলেন, প্রথমবারে অনুষ্ঠিত বাংলাফেস্ট ছিল অত্যন্ত সফল একটি আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বহির্বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানার প্রেসিডেন্ট ও সিওও এবং বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ ধারী সাঈদ-উর-রব।
ঠিকানা পবিারের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাঈদ-উর-রব বলেন, বিচিত্র সংস্কৃতির দেশ আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশী অথবা আমেরিকান বাংলাদেশী হিসাবে আমাদের যে পারিবারিক বন্ধন, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ রয়েছে তা বুকে ধারণ করে এদেশের সংস্কৃতির সাথে একত্রে কাজ করতে হবে। কিন্তু এখন বাঙালিরা যে কাজ গুলো করছে অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র -নজরুল জয়ন্তী, পথমেলা, এনএবিসি, এবিসি, সাহিত্য সম্মেলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দিবসগুলোও পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে। এই দিবসগুলো পালন করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে স্থাপিত হচ্ছে নতুন সম্পর্ক। এতে আমাদের শেকড় পর্যায়ক্রমে আরো মজবুত হচ্ছে। রব বলেন, বাংলা ফেস্ট-২০১৩ নামে যে স্যুভেনিরটি প্রকাশ করেছেন, সেটাও চমৎকার একটা প্রকাশনা। স্বপন সাহা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিরা তুলে ধরছে আমাদের ঐতিহ্য। ব্রাইডাল শোর পর মেইন স্ট্রিমের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ব্যারী নিউম্যান ও জেটি কার্টারের পরিবেশনার পর বিজয়া পরিবেশন করেন আধুনিক গান। এরপর স্টেজ চলে যায় কানাডা থেকে আগত ব্যান্ড দল চাইমের খালিদ সুমনের দখলে| পরিচিত করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় ৬ ঘণ্টার বাংলা ফেস্ট ২০১৩-এর। নিজেকে ছাড়াও আহ্বায়ক পরিচয় করিয়ে দেন ফারিয়া চৌধুরী, মাকসুদ রহমান, খয়রুজ্জামান, রিয়াজ আহমেদ, শাম্মী আলাদীন, সামিনা আযম, দিদার ভূঁইয়া, সুরঞ্জিত চ্যাটার্জি, আসিফ চৌধুরী, ফারহানা চৌধুরী পপ, নূরুল চৌধুরী, খাজা চৌধুরী, শওকত চৌধুরী, সৈয়দ এলাহী, পারভীন এলাহী, মোহাম্মেদ ফায়েজ, তুহিন ফাইরাজ, ফারজানা হাকিম, মোহাম্মদ হক জুয়েল, কাজী হোসেন, মোহাম্মেদ হোসেন, ফারহানা হুদা, দেলওয়ার হোসেন, শিরীন ইলিয়াস, মোহাম্মদ ইকবাল, কলি ইকবাল, বদরুল ইসলাম, মহিউদ্দিন জনি, রুমি কামরুল, শিখা কর, অশোক কর, সৈয়দ খালিক, মোরশেদ খান বাবুল, আমেনা খান নিটুল, লতিফা খানম, সাগর লস্কর, সৈয়দ পারভেজ, মিজান পাটওয়ারি, মোহাম্মদ রফিক, আশু রহমান, সুমি রহমান, মারুফা রহমান, গোলাম রহমান, রিপন রহমান, এম রহমান, সাবরিনা রহমান, তাপস রশিদ, অমিত রায়, ফারিদা শেখ, মোহাম্মদ শেখ, মোহম্মদ উদ্দিন, নাজনীন জামান প্রমুখকে।