রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন

েডস্ক ইরেপার্ট : মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালের পর থেকে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে জোরেশোরে। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হলে স্পিকার কে হবেন।
আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বঙ্গভবনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদও হয়ে উঠবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান ও সংসদের স্পিকার তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বর্তমান স্পিকার আব্দুল হামিদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর কয়েকদিনের মধ্যে তিনি নতুন বাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার নিয়ে বিপদে পড়বে সরকার। কারণ তার মতো দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সব দলের কাছে তুলনামূলক সমাদৃত স্পিকার পাওয়া কঠিন হবে।
সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। স্পিকার পদে কাকে নির্বাচন করা হবে তা নিয়ে ভাবছে সরকার। স্পিকার হিসেবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে জাতীয় সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, বর্তমান ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আশরাফ আলী ও এবিএম গোলাম মোস্তফার নাম।
বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গত বুধবার বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। শুক্রবার বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িতগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের ১১ ফেবুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী দুর্দিনে দলের কাণ্ডারি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে সব মহলে শোকের পাশাপাশি আলোচনা শুরু হয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম পছন্দ সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে মো. জিল্লুর রহমানও সংসদের উপনেতা ছিলেন। দলীয় নেত্রীর প্রতি আনুগত্যের কারণে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে গেলে দলের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রীর দায়িত্ব সাজেদা চৌধুরীকেই দিয়ে যান।
অন্যদিকে মহাজোটের প্রধান পার্টনার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রেসিডেন্ট পদটির অন্যতম দাবিদার বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মহাজোটে যোগ দেয়ার সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রধান দাবি ছিল এরশাদকে কিছু সময়ের জন্য হলেও রাষ্ট্রপতি করা। মো. জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করার পর এরশাদ অভিমান করে বেশ কিছু দিন মহাজোট ছাড়ার হুমকি দেন। জাতীয় পার্টির দাবি মহাজোট অটুট রাখতে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদের সাক্ষাতের সময় তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, জিল্লুর রহমানের পরে তার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বিভিন্ন সময়ে এরশাদ তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, এক দিনের জন্য হলেও তিনি আরেকবার বঙ্গভবনের চেয়ারে বসবেন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ইন্তেকালের পর জাতীয় পার্টিতে নতুন করে এসব আলোচনা জোরদার হয়েছে। জাতীয় পার্টির অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিকট প্রতিবেশী দেশের কাছে শেখ হাসিনার পরই সবচেয়ে বিশ্বস্ত হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সে সুবাদে জাতীয় পার্টি শিবিরে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জাপার শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে যে রাজনৈতিক দুর্যোগ অপেক্ষা করছে তাতে তিনি এরশাদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানোর ঝুঁকি নেবেন না। এছাড়া এর আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল, বর্তমান মেয়াদেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে গিয়ে তার লন্ডনপ্রবাসী ছোট বোন শেখ রেহানাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে পারেন। সেক্ষেত্রে শেখ রেহানাকে কোনো উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে আনতে হবে।
সব মিলিয়ে জাতীয় সংসদে এবং বঙ্গভবনে নতুন মুখ হিসেবে কাকে দেখা যাবে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে শনিবারের আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির বৈঠকের পর। এদিকে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ টেলিফোনে নতুন বার্তাকে বলেন, “এখনো শোক কাটেনি। তারপরও সংসদ অধিবেশন দেরি আছে। আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তারপর সংসদের স্পিকার। এখন ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করছেন।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান স্পিকার রাষ্ট্রপতি হলে এখন থেকে স্পিকার খুঁজতে হবে। সেটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ পাওয়া মাত্র করা হবে।