মৌলভীবাজারের বহুল আলোচিত গাইনী চিকিৎসক রাজিয়া সুলাতানা ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ প্রতারনার অভিযোগে বহুল আলোচিত গাইনী চিকিৎসক ডাঃ রাজিয়া সুলতানাকে গত ১০ মার্চ গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় ১১ মার্চ মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল আদালতে প্রেরন করে। আদলত একইদিন বিকেলে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গতকাল ২৫ মার্চ সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে আদালত জামিন প্রার্থনা করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করার নির্দেশ প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে প্রতারনা, আত্মসাত ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সজীব গত ১৫ জানুয়ারী একটি মামলা করেন। এ মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট সামছুল আরেফিন তার বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপেক্ষিতে রোববার রাতে মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত থেকে জামিন নেন ডাঃ রাজিয়া সুলতানা একই মামলা আজ সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে আদালত জামিন প্রার্থনা করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করার নির্দেশ প্রদান করেন বলে মামলা বাদী জে.পি.এল ডোর এন্ড ফার্নিচার ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম সজিব জানান। এছাড়াও বিভিন্ন মামলা সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে বহুল আলোচিত নারী চিকিৎসক ডাঃ সৈয়দা রাজিয়া সুলতানা, তার গাড়ি চালক রাজু মিয়া (২৪) সহ অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজীর অভিযোগে জে.পি.এল ডোর এন্ড ফার্নিচার ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম সজিব এ দায়ের করেন। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সজিবের দায়েরকৃত পূর্বের মামলা তুলে নেয়া এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদার জন্য মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। মামলা তুলে নেয়া না হলে এবং দাবীকৃত টাকা না দিলে সুব্রত বাইন বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে মৌলভীবাজার মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ১৩/৪২, ধারা ৪০৬/৪২০/৩৮৫/৫০৬। ডাঃ রাজিয়া সুলতানা ব্যবসায়ী সজিবের প্রতিষ্টান থেকে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ফার্নিচার কেনে নেয়ার পর টাকা না দিয়ে টালবাহানা করে আসছিলেন। এ নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মৌলভীবাজার এ মামলা দায়ের করেন। আদালত এর আদেশে নারী চিকিৎসকের ঢাকাস্থ (বাসা নং-০৯, রোড নং-০৩, সেক্টর-১০, থানা-উত্তরা, পশ্চিম ঢাক) বাসা থেকে মালামাল উদ্ধার করা হয়। মালামাল উদ্ধারের পর থেকে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীকে মামলা তুলে নেয়া এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিলেন। সজিবের একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৭৮৫৬ নং গাড়িখানা) আত্মসাতের দায়ে ডাঃ রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ঢাকা আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ৯৮ ধারায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩২৭/১২। চিকিৎসকের গাড়ির চালক রাজু মিয়া নাকি গাড়িটি লুকিয়ে রেখেছেন। মামলায় তাকে ২নং আসামীও করা হয়েছে। গাড়ি চালক রাজুও তাকে বিভিন্ন মোবাইল নং থেকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। বাদী তার এজাহারে আরোও উল্লেখ করেছেন, বিবাদীগনের ভয়ে তিনি সর্বদা আতংকগ্রস্থ। বিবাদীগণ তার সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া অপূরণীয় ক্ষতি সাধণ করতে পারে এবং তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়া ও চাঁদা দাবী করিয়া মিথ্যা মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে তার ক্ষতি করার পাঁয়তারায় লিপ্ত আছে। প্রভাশালী বিবাদীর সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের ভয়ে ব্যবসা বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালণা করতে পারছেনা এবং বাসা থেকে বের হতে ও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার বনশ্রীর বাসা থেকে সজীবকে গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। বেলা ৫টায় তাকে মৌলভীবাজার মডেল থানা হাজতে রাখা হয়। কিন্তু এর আগেই তার বিরুদ্ধে ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে ৩টি মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। চুরি ও মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী হিসেবে দেখানো হয় সিটি ডায়গষ্টিক সেন্টারের পরিচালক ডাঃ সোহেল রানাকে। এ মামলার রেকর্ড সময় দেখানো হয়েছে বেলা ১টা ৩০ মিনিট (মামলা নং ১০, তারিখ ৭/৮/১২)। এর ৩৫ মিনিটের মাথায় বেলা ২টা ৫ মিনিটে সজীবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন নারী চিকিৎসক (মামলা নং ১১, তারিখ ৭/৮/১২)। আবার এর ১০ মিনিট পর বেলা ২টা ১৫ মিনিটে সজীবের বিরুদ্ধে আরেকটি চাঁদা দাবি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাটিরও বাদী ওই নারী চিকিৎসক (মামলা নং ১২, তারিখ ৭/৮/১২)। সেই ঘটনার পর তাকে মৌলভীবাজার মাতৃ মঙ্গল থেকে নোয়াখালী সদরে মাতৃ মঙ্গল (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) বদলী করা হয়। মৌলভীবাজারের মাতৃ মঙ্গলের চার্জ হস্তান্তর নিয়ে বিভিন্ন নাটকিয়তা শেষে নোয়াখালীতে পোষ্টিং নেন। নোয়াখালীতে তার পোষ্টিং হলে সেখানে অবস্থান করেননি। তিনি মৌলভীবাজারেই অবস্থান করে আসছিলেন বলে অনেকেই জানান।