বড়লেখায় শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হাহাকার : আহত ২৫

জালাল আহমদ: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গত সোমবার সকালে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও ঘুর্ণিঝড়ে ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
অতিমাত্রায় শিলাবৃষ্টি হওয়ায় অনেক বাড়িতে টিনের চালা ছিদ্র হয়ে ভেঙ্গে পড়ে শিশুসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। গাছপালা উপড়ে ও ডালপালা ভেঙ্গে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। হাকালুকি এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০০ একর বোরো ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ৩৫ ঘন্টা বিদ্যুতহীন ছিল পুরো উপজেলা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে বর্তমানে হাহাকার চলছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সহায়তার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।
সরেজমিন উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের দোহালিয়া, গজভাগ, হাকাইতি, রতুলী ও গাংকুল গ্রাম, সুজানগর ইউনিয়নের সুজানগর, ভোলারকান্দিসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে এবং সমনভাগ চা বাগান ঘুরে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে অঝোর ধারায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টির সাথে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় গ্রামগুলোর ওপর দিয়ে। শিলাবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দক্ষিণভাগের দোহালিয়া ও রতুলীসহ আশপাশের গ্রাম। এসব এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ির টিনের চালা শিলাবৃষ্টির কারণে ছিদ্র ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। দক্ষিণভাগের গজভাগ গ্রামের এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের চালা ভেঙ্গে পড়ে ১ম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী জেবিন বেগম ও সুমারা বেগম, স্কুলছাত্র জুবের আহমদ, আজমল আলী (৮৫), আয়েশা বেগম (৪৫) সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গজভাগ গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, ছলিম উদ্দিন, আছার উদ্দিন এবং স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিসহ সমনভাগ চা বাগানের চা শ্রমিক রসনা গাং (৭০) জানান, বিগত ৫০ বছরের মধ্যে এতো ভয়ানক ও বড়ো ধরণের শিলাবৃষ্টি তারা দেখেননি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন জানান, আকস্মিক এই শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। হারিয়েছেন ঘরবাড়ি ও ক্ষেতের ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের হিসাবমতে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে গত সোমবার বিকেল ৩টায় মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমিনুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এমাদুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সত্মরের কর্মকর্তারা ড়্গতিগ্রসত্ম এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেই প্রত্যাশায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের রেভিনিউ ফান্ড থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকদের সহায়তা প্রদান করেন। আরও সহায়তা করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন খান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ হাকালুকি এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রায় ২০০ একর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমিনুর রহমান জানান, আকস্মিক এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম ও ১টি চা বাগানের ৫০ টি ঘর সম্পূর্ণভাবে এবং ৪০০ টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার অধিক হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।