উৎকণ্ঠায় দেশ

নিউজ ডেস্ক : ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। লংমার্চ প্রতিরোধ ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে হরতালের ডাক দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ২৭টি দল ও সংগঠন। বাম দলগুলো তাতে সমর্থন দিয়েছে।
এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে লংমার্চ প্রতিহত করতে দেশব্যাপী ২২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি এ লংমার্চের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
অন্যদিকে সরকার প্রথম দিকে হেফাজতের লংমার্চে বাধা দিতে না চাইলেও আওয়ামী ঘরানার সংগঠনগুলোর হরতালের ডাক দেয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছে। এটা কি সরকারের কোনো কৌশল, নাকি অন্যকিছু তা নিয়ে সাধারণ জনগনের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। দেশব্যাপী অবশ্যম্ভাবী এক নাশকতার অশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত দেশের মানুষ।
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হেফাজতের লংমার্চের আড়ালে জামায়াত নাশকতা চলাতে পারে। মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, ‘লংমার্চ যদি কোনো পর্যায়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা আইন বহির্ভূত কোনো কাজে তারা সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে তাহলে যথাসময়ে যথাস্থানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি জানান, হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড সরকার তথ্য সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, লংমার্চে সরকারের লোকজনই গোলযোগ সৃষ্টি করবে। লংমার্চে কোনো ধরনের সমস্যা হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। এর জন্য জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’
যুক্তি হেসেবে তিনি বলেন, সরকার একদিকে লংমার্চ করার অনুমতি দিয়েছে, অন্যদিকে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে বলেছে।
এদিকে রংমার্চের বিরুদ্ধে দেয়া হরতাল প্রত্যাহার না করলে ৭ এপ্রিল থেকে লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছ হেফাজতে ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালবাগ শাহী মসজিদ মাদরাসায় সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফি এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার সমর্থিত কয়েকটি সংগঠনের’ ডাকা ৬ এপ্রিলের হরতাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রত্যাহার না করলে ৭ এপ্রিল থেকে লাগাতার হরতাল দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ থেকে পিছপা হওয়ার কোনো পথ আমাদের জন্য খোলা নেই। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা এলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লংমার্চ কর্মসূচি বানচাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে সরকার। মন্ত্রী ও সরকার দলীয় নেতারা আমাদের এ আন্দোলনকে জঙ্গি আখ্যায়িত করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সরকারদলীয় কিছু চিহ্নিত দালাল সংগঠন শনিবার হরতাল ডেকে হঠকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহম্মদ এরশাদও হেফাজতের লংমার্চে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথে লংমার্চে বিভিন্নভাবে সহায়তার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
কওমি মাদরাসার একটি প্রতিনিধি দলও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হেফাজতে লংমার্চের পক্ষে কথা বলেছেন। এ অবস্থায় নজিরবিহীন শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে ৬ এপ্রিলের দিকে। সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ ও নিরপেক্ষ জনগণ আসলে কোন পক্ষকে সমর্থন জানাবেন তা না ভেবে বরং উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্য করছেন, স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক সংঘাত ছাড়া দেশে এমন অরাজক পরিস্থিতি কখনো তৈরি হয়নি।
শাহবাগ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব খুন হওয়ার পর ‘তিনি নাস্তিক ছিলেন’ বলে বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক ওয়েবসাইটে তার নামে বিভিন্নেইসলাম বিদ্বেষী লেখা প্রকাশ করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন মতাবলম্বী গোষ্ঠী শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নাস্তিকদের মঞ্চ’ বলে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন।
মানবতা বিরোধীদের বিচার নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের আন্দোলন এবং বিরোধী দলের সরকার পতনের আন্দোলন ছাপিয়ে সারা দেশে উৎকণ্ঠা ছড়ালো হেফাজতে ইসলাম।