হেফাজতের হরতালে সারা দেশে স্থবিরতা : আহত তিন শতাধিক

লংমার্চে বাধা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-নির্যাতন-গ্রেপ্তার এবং ১৩ দফা দাবি আদায়ে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে রাজধানী ঢাকার মতো সারা দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। দূরপাল্লার গাড়ি যেমন রাজধানী ছেড়ে যায়নি, তেমনি বাইরে থেকেও রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। অভ্যন্তরীণ রুটেও যান চলাচল করেছে খুবই কম। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছে। এ সময় বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হরতালে দোকান-পাট খোলেনি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন চলাচল।
এ সময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা ট্রেন লাইনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করে। বেশ কয়েকটি স্থানে সরকার সমর্থকরা হরতালবিরোধী মিছিল সমাবেশ করেছে। এছাড়া হরতালে নৌ-যান চলাচলও স্থবির ছিল। রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে কাঁচপুরে সংঘর্ষ ব্যাপকতা পায়। এর বাইরে চট্টগ্রামে হরতালের সমর্থনে সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও গুলি চালিয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৮ আহত হয়েছে।
সারা দেশে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করেছে দাবি করে সোমবার বিকেলে লালবাগস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী।এ সময় তিনি সারা দেশে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা হরতাল শান্তিপূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। দেখাতে চেয়েছিলাম সংঘর্ষ-ভাঙচুর ছাড়াও হরতাল করা সম্ভব। কিন্তু সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা তা করতে দেয়নি।’
নূর হোসেন কাসেমী বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা আসলেও আমরা পাল্টা হামলা না করে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছি। নেতাকর্মীরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। কোথাও কোনো জ্বালাও-পোড়াও হয়নি।’ তিনি অভিযোগ করেন, সারা দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হেফাজতের অন্তত তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সরকার হেফাজত কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে এই নায়েবে আমির বলেন, জেলার এক কমিশনারের নেতৃত্বে দিদারুল আলম, মাসুমসহ এক দল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হেফাজতের কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে।
এ সময় মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী হেফাজত ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই বলেও নিজেদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা উৎখাতে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা শুধু আমাদের দাবি পূরণ চায়।’
বর্তমান আইনে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচার সম্ভব- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে নূর হোসেন কাসেমী বলেন, ‘আমরা এমন আইন চায় না। আমরা ইসলামি আইন চায়, যে আইনে সারা দেশের সকল নারী-পুরুষ শান্তিতে বসবাস করবে।’
জনগণ ক্ষমতা দিলে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূর হোসেন কাসেমী বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নেইনি বলে ক্ষমতা গ্রহণের প্রশ্নই আসে না।’
খেলাফত আন্দোলনের আমির আহমাদুল্লাহ আশরাফের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা আজাদ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রকীব, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাহফুজুল হক, মঞ্জুরুল ইসলাম, আবুল হাসানাত আমিনী, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, ঢাকা মহানগর প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল ও মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন