
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অন্যতম মণিপুরীরা এক বর্ণাঢ্য সংস্কৃতিকে ধারণ করে আছে। এই বর্ণময় সংস্কৃতির নানা বর্ণবৈচিত্র্যের অন্যতম হলো মণিপুরীদের নববর্ষ উৎসব ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’। মণিপুরীদের নিজস্ব একটি বর্ষগণনারীতিও আছে। ‘মলিয়াকুম’ নামের এই চান্দ্র বর্ষের হিসেবে গত ১১ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এই সনের ৩৪১১ তম বর্ষ। মণিপুরী সনের নববর্ষের এই দিনে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বর্ণময় পরিবেশনার মাধ্যমে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার ৭নং আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামে উদযাপিত হয় মণিপুরীদের নববর্ষ উৎসব ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রা শেষে মণিপুরী যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী ‘কাং খেলা’, কড়ি খেলা, বনদেবতার পূজো, ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যের পরিবেশনা ‘থাবল চোংবী’ ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
সন্ধ্যায় কোনাগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। মণিপুরী নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি কবি এ, কে, শেরামের সভাপতিত্বে ও হামোম প্রবিতের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পদক্ষেপ বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সভাপতি বাদল চৌধুরী, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভূঁইয়া। আলোচনায় অংশ নেন লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, হামোম তনুবাবু, কবি সনাতন হামোম, থোঙাম প্রহলাদ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বহু জাতি, বহু সংস্কৃতির এই দেশে মণিপুরী জাতি তার সংস্কৃতির বর্ণবৈচিত্র্য নিয়ে আছে। ‘চৈরাউবা’ বা মণিপুরী নববর্ষ উৎসব তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই বৈচিত্র্য নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির রুপ আরো বর্ণময় হোক-এটাই আমাদের কামনা।
আলোচনা সভায় বক্তারা মণিপুরী নববর্ষ উৎসবসহ মণিপুরী সংস্কৃতির বর্ণবৈচিত্র্যের নানা বিষয় জাতীয় পর্যায়ে যথাযথভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। সকাল থেকে গভীরর রাত পর্যন্ত ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’ মণিপুরী নববর্ষ উৎসবের অনুষ্ঠানমালা চলে।
অপরদিকে মণিপুরীদের বর্ষবিদায়ের ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসবকে কেন্দ্র করে মণিপুরী থিয়েটার নটমন্ডপে আয়োজন করছে ৪ দিন ব্যাপী নাট্যোৎসব। কমলগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের গ্রামীণ অবয়বে মণিপুরী থিয়েটারের নির্মাণ করা নিজস্ব স্টুডিও থিয়েটার নটমন্ডপে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। তিন বছর ধরে নানা পর্যায়ে বিন্যস্ত হয়ে এই স্টুডিওটি এখন প্রায় সম্পূর্ণ। উভয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুরী পল্লীগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। উৎসবের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য অবলম্বনে মহাকাব্যের বীরাঙ্গনা নারীদের কাহিনী নিয়ে জ্যোতি সিনহার একক অভিনয়ে আলোচিত নাটক ‘কহে বীরাঙ্গনা’, সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিটে চন্ডীদাসের কাব্য অবলম্বনে রাধা ও কৃষ্ণের লৌকিক প্রেমের আখ্যান ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ অনুষ্ঠিত হয়।