কমলগঞ্জে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ১৯ বছরের সাবালিকা দেখিয়ে বিয়ে : জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে বাল্য বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা হয়নি
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ১৯ বছরে সাবালিকা দেখিয়ে মৌলভীবাজারের নোটারি পাবলিক এফিডেভিট করে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করে একটি ছেলে। নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের শর্ত অনুযায়ী ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে আকদ ও কাবিননামা করে ১১ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা করার সময় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে অবশেষে এ বাল্য বিবাহটির আনুষ্ঠানিকতা পন্ড হয়ে যায়।
জানা যায়, শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝির গ্রামের রিক্সা চালক মনছব উল্যার মেয়ে তাহেরা বেগম (১২) এ গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। পার্শবর্তী সতিঝির গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে মোঃ বদরুল ইসলামের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ১৯ বছরে সাবালিকা দেখিয়ে মৌলভীবাজারে নোটারি পাবলিক এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের ৫ নম্বর শর্ত অনুযায়ী ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে আকদ ও কাবিনামার মাধ্যমে ১১ এপ্রিল রাতে নিজ বাড়িতে বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা করার সময় কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার লিলি ও শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদের হস্তক্ষেপে এ বাল্য বিবাহটির আনুষ্ঠানিকতা পন্ড হয়ে যায়। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, নোটারী পাবলিক এফিডেভিটকালে ছেলে মেয়েদের জন্ম নিবন্ধন কার্য দেখার নিয়ম করলে এভাবে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ১৯ বছরের সাবালিকা করা হত না। ভাদাইর দেউল রোয়াব উল্ল্যা বেসরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন তাহেরা বেগম তার বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পরভীন আক্তার আরো বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ বাল্য বিবাহটি বন্ধ করতে সাহায্য কামনা করায় তিনি বৃহস্পতিবার রাতেই ভাদাইর দেউল গ্রামে উপস্থিত হয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করেন। পরবর্তী আইনী সহযোগিতা চেয়ে কমলগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করেন। কমলগঞ্জ থানার ওসি নীহার রঞ্জন নাথ গতকাল শুক্রবার সকালে ছাত্রীর বাবা মনছব উল্যাকে থানায় ডেকে নিয়ে এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। আলাপকালে ছাত্রী তাহেরার বাবা মনছব উল্যা এ প্রতিনিধিকে বলেন, ছেলে নানান ভয় ভীতি দেখিয়ে তার মেয়েকে মৌলভীবাজার নিয়ে নোটারি পাবলিকে এফিডেবিট করে। তাছাড়া ছেলেটি এখন আর তার বাড়িতে না ফিরে তার (মনছব উল্যার) বাড়িতে আশ্রয় গ্রহন করে। তিনি মনে করেন ছেলে অপেক্ষা করলে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার কাছেই মেয়ের বিয়ে দিবেন।
তবে প্রতারনা করে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ১৯ বছর দেখিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করা সম্পর্কে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত বদরুল ইসলাম বলেন, তিন বছর ধরে এ মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক। উভয়পক্ষের বাবা মা রাজি না হওয়ায় সে মেয়েটিকে নিয়ে নোটারি পাবিলক এফিডেভিট করে বিয়ে করে। তবে ছেলের বাবা মাসুক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে আটকিয়ে রেখে মেয়ের বাবা নোটারি পাবলিক এফিডেভিটের মাধ্যমে এ বিয়ে করিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের চাপে পড়ে তিনি এখন উল্টো কথা বলছেন।