আজ পহেলা বৈশাখ

ডেস্ক রিপোর্ট : পুরাতন সব মুছে দিয়ে প্রাণে নতুন সম্ভাবনার আলো জ্বালাতে আবার আসছে পহেলা বৈশাখ। বসন্তের শেষ দিন শনিবার রাত পোহালেই প্রথম সূর্যের হাত ধরে আসবে নতুন বাংলা বছর ১৪২০। বাংলা বছরের শেষ দিনে ‘চৈত্রসংক্রান্তি’র মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয় ১৪১৯ সালকে। বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এখন সারা দেশের মানুষ প্রস্তুত। সারা দেশে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান-উৎসবের।
রাজধানীতে বর্ষবরণের মূল আয়োজন রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রায় চার দশকের নিয়মিত অনুষ্ঠানটি। ছায়ানটের এ প্রভাতী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ভক্তিরস ও দেশপ্রেমের গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই সঙ্গীতভিত্তিক আয়োজন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নিয়মিত বর্ণিল আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। চারুকলার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর কয়েকদিনের অক্লান্ত খাটুনির পর তৈরি করেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভরপুর এ শোভাযাত্রার দুর্দান্ত মুখোশ আর পশুপাখির আকৃতিগুলো।
রমনায় ২০০১ সালের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে কড়া নিরাপত্তায় পালিত হয় এ অনুষ্ঠান। এবারও কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডগ স্কোয়াড, সিসিটিভি আর প্রথমবারের মতো ইনফ্রা রেড ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এবার বাড়তি সংযোজন হিসেবে থাকছে রমনার আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টারে মহড়া। ছায়ানট জানিয়েছে তাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সকাল ৬টায় শুরু হয়ে শেষ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
সরকারি পঞ্জিকা মতে এবার পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল, আর সনাতনী পঞ্জিকার হিসেবে তা পড়ে এপ্রিলের ১৫ তারিখে।
আলপনায় বর্ষবরণ
রঙ্গিন আলপনায় নতুন বছরকে রাঙাতে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আঁকা হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ এ আলপনা। মোবাইল ফোন অপারেটর এয়াটেলের ২৬০ জন শিল্পী এই আলপনা আঁকায় অংশ নেন।
গত বছরও মানিক মিয়া এভিনিউর উভয় পাশের রাস্তায় আঁকা হয়েছিলো দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের বৃহৎ আলপনা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, আলপনার মূল নকশা করেছেন চিত্র শিল্পী রফিকুন নবী, কাইয়ুম চৌধুরী ও মুনিরুজ্জামান। এ বছর আলপনা আঁকতে ব্যাবহার করা হবে মোট ছয়টি রং।
বাংলা সালের গোড়ার কথা রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্্রাট আকবরের যুগে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। ষোড়ক শতকে আকবর ‘ফসলী সন’ প্রবর্তনের মাধ্যমে যে বাংলা সাল চালু করেছিলেন সময়ের বিবর্তনে সেই দিনটি এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব পরিণত হয়েছে।
আকবরের নবরতœ সভার আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজি খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য হিজরি চান্দ্রবর্ষকে সৌরবর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ফসলি সালের শুরু করেছিলেন। তিনিই হিজরিকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন। বৈশাখ নামটি নেওয়া হয়েছিলো নক্ষত্র ‘বিশাখা’ থেকে।
সবকিছুর মতো পয়লা বৈশাখেরও বাণিজ্যিকীকরণ হওয়ায় তা পরিণত হয়েছে ভালো ব্যবসার সুযোগেও। দৈনন্দিন জীবনে বাঙালিপনার ছাপ কমই এমন নাগরিকও এদিন পান্তা-ইলিশে মজতে চান।