মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির ঘরে জ্বলছে মতদ্বৈততার আগুন। দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বিএনপিতে। নাসের রহমান গ্রুপের দ্রোহের আগুনে তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে জেলা বিএনপি। তারা বিএনপির তৃতীয় একটি গ্রুপের সৃষ্টি করেছেন। নতুন গ্রুপের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ও আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে গতকাল ১৩ এপ্রিল শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ফলে জেলা সভাপতি নেতা-কর্মী শুন্য হয়ে পড়েছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। দলীয় সুত্রে জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে সভাপতি নাসের রহমান ও সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানীর নিয়ন্ত্রনে দুটি গ্রুপ বর্তমান ছিলো। সম্প্রতি জেলা সভাপতির গ্রুপের মধ্যে মারাত্মকভাবে টানাপোড়ন শুরু হয়। নাসের রহমান একক ক্ষমতায় ভেঙ্গে দেন সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি। একই সাথে পৌর যুবদলের কমিটি ভেঙ্গে দেন এবং তার বাগানবাড়িতে বসে অনুগত নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এসব কমিটি গঠন করেন। এতে নেতা-কর্মীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ক্ষোভের বহ্নিপ্রকাশ ঘটাতে গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে নাসের রহমান গ্রুপের নেতা-কর্মীরা বাগান বাড়িতে তার সাথে দেখা করতে যান। তিনি তাদের সাথে দেখা না করে উল্টো অশালীন আচরন করেন। এরপর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সময়ে জেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীর সাথে জেলা বিএনপির সভাপতির দুরত্ব সৃষ্টি হয়। জেলা ছাত্রদলের নেতাদের অভিযোগে জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানের ছবি ও লগো দিয়ে ক্যাপ বানিয়ে নেতা-কর্মীকে মধ্যে বিতরণ করেন। এ বিষয়টি নাসের রহমান সহজভাবে না মেনে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ক্যাপে কেনো তার ছবি দেওয়া হলো না এ কারনে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এছাড়া কেন্দ্র অনুমোদিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ মুকিতকে একক মতামতে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে ২০০৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তিন সদস্যের নাম উল্লেখ করে জেলা বিএনপির কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনে আজ পর্যন্ত জেলা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি জেলা নেতৃবৃন্দ। এই সব ক্ষোভের কারনে নাসের রহমান বলয়ের প্রভাবশালী নেতা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আশিক মোশারফ, সাধারন সম্পাদক ফয়সল আহমদ, জেলা বিএনপি নেতা বকসী মিজবাউর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি সৈয়দ ময়নুল হক, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি হেলু মিয়া, সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান মজনু, জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জাকির হোসেন উজ্জল, যুগ্ম আহবায়ক সরওয়ার মজুমদার ইমন, পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মমশাদ আহমদ, আনিচ্ছুজামান বায়েছ, ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ফুঁসে উঠেন। এ ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে শহরে দুই সহস্র্রাধিক নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে নতুন একটি গ্রুপের আত্মপ্রকাশ ঘঁটায়। সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আশিক মোশারফ জানান, দেশ ও জনগণের প্রতি যাদের কমিটমেন্ট নেই, দলীয় নেতা-কর্মীর প্রতি মমত্ববোধ নেই তাদের সাথে রাজনীতি করা কঠিন। ২/১ জন অরাজনৈতিক ব্যক্তির কারনে দলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সভাপতির ঘনিষ্ট অনুসারী মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী জানান, শুনেছি বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী মিছিল করেছে। কেনো তারা মিছিল করছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে। জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে ২/১জন খারাপ প্রকৃতির লোক রয়েছে তাদের সরানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেগম খালেদা রব্বানী জানান, নাসের রাজনৈতিক নেতা হলে তো তার সাথে নেতা-কর্মী থাকবে। সে দলীয় গঠনতন্ত্রের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে কখন কাকে ইন আউট করে। তার খামখেয়ালি আচরণে দলের মধ্যে বিশৃংখল অবস্থা বিরাজ করছে। জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।