যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের স্বর্ণপদক নিলেন ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডাল গ্রহণ করেছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্মাননা দেয়া হলো ইউনূসকে, যিনি এই পদক পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি ও মুসলিম।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার।
কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসিও অংশ নেন এ অনুষ্ঠানে। পরে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য দেন ইউনূস।
জন বোয়েনার বলেন,“ড. ইউনূস মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে কাজ করে চলেছেন, যার চেয়ে বড় কাজ আর হয় না।”
নিউ জার্সির কংগ্রেস সদস্য রাস হল্ট বলেন, “অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনেকের ধারণাই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন ইউনূস।”
সম্মাননা গ্রহণ করে দৃশ্যত আবেগ আপ্লুত ইউনূস জানান, তিনি প্রথমবার ক্যাপিটলে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য। সে সময় তিনি মিডল টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক।
কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডাল দেয়ায় কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই সম্মাননা তাঁর ক্ষুদ্রঋণের স্বীকৃতি। তিনি বলেন, ‘কেবল আমার জন্য নয়, এই সম্মাননা সেই সব নারীদের জন্য, যারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনাদের বোঝাতে পেরেছেন যে, অনুদান নয়, প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সহায়তা পেলে তারাও স্বনির্ভর হতে পারেন।”
পরে তিনি বলেন, “সকলে আমার কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বলেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আমি এ সম্মান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে উৎসর্গ করলাম।”
জন বোয়েনার অনুষ্ঠানে জানান, মুহম্মদ ইউনূস হলেন বিশ্বের সপ্তম ব্যক্তি যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের পাশাপাষি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডাল পেলেন।
স্পিকার জানান, ইউনূসের অনুরোধে এবার মেডালের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেডালের এক পিঠে বাংলায় লেখা হয়েছে- ‘আমরা দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠাবো’।
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসকে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়।
একই কারণে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম’ পান ড. ইউনূস। এবার পেলেন ‘কংগ্রেশনাল গোল্ডে মেডাল’।
ইউনূসের আগে নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইলি উইসেল, অং সান সু চি ও মাদার তেরেসা এই তিনটি পুরস্কার পেয়েছেন।
বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান ইউনূস।
ওয়াশিংটনের অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও ইউনূসের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতারা কেউ গ্রামীণ ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেননি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়ার প্রসঙ্গটিও ওঠেনি।
অনুষ্ঠানে ইউনূসের মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপেরা শিল্পী মনিকা ইউনূস ‘বিউটিফুল ড্রিমার’ গানটি পরিবেশন করেন।
ইউনূস পরিবারের সদস্যরাসহ জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আওয়াল মিন্টু ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নূরন্নবী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।