আরব কূটনীতিকদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক

ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচন পদ্ধতি এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতভেদের মধ্যে আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
বুধবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা ১০টি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আরব দেশগুলো উদ্যোগে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সৌদি আরবসহ ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই বৈঠকে ছিলেন। অন্য দেশগুলো হচ্ছে- সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, মরক্কো, ইরাক, লিবিয়া, মিশর, কাতার, ওমান ও ফিলিস্তিন।
ঢাকায় কূটনীতিক কোরের ডিন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শাহের মোহাম্মদ রাষ্ট্রদূতদের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কূটনীতিকদের আগ্রহেই এই বৈঠক হয়েছে।
“রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের বিরাজমান সঙ্কট উত্তরণে আগামীতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান।”
খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়।
“এ ব্যাপারে যে কেউ উদ্যোগ নিলে তা আমরা গ্রহণ করব।”
আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবি বিএনপিরে, তবে সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ করা হচ্ছে বলেও দাবি বিএনপির।
বিএনপি চেয়ারপারসন রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন, সঙ্কট উত্তরণে বিরোধী দলের সঙ্গে সরকার কোনো যোগাযোগ করেনি।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আরব কূটনীতিকরা জানিয়েছেন বলে জানান শমসের মবিন।
প্রভাবশালী পশ্চিমা কোনো দেশের ইঙ্গিতে আরব কূটনীতিকদের এই উদ্যোগ কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা যতটুকু জানি, এটা আরব দেশগুলোর নিজস্ব উদ্যোগ। কী কারণে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছে, তা আমরা জানি না।”
খালেদা জিয়া কয়েকমাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি দৈনিকে লেখায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে সঙ্কট সমাধানে ওয়াশিংটনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
দেশের বিষয়ের বিদেশিদের ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়ে ওই লেখার প্রবল সমালোচনা ওঠে সরকারের মধ্য থেকে।
আরব দেশগুলো বাংলাদেশে আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা আশা করছে বলে শমসের জানান।
আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যায় শমসের মবিন বলেন, চৌধুরী বলেন, “মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি সংবিধানেও সংযোজন করেছিলেন।
“এই কারণে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অর্থাৎ মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, এখানে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়- সেজন্য আরব দেশের রাষ্ট্রদূতরা নিজেদের উদ্যোগে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।”
সরকারের সঙ্গে কথা বলার পর রাষ্ট্রদূতরা প্রয়োজনে আবার বিরোধী নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, বলেন বিএনপি নেতা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি নির্মূলসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে।”
সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও সৌদি আরবে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ দূত মো. এনামুল হক চৌধুরীও বৈঠকে ছিলেন।