পত্রিকা সমাজের দর্পণ ——– শাবি ভিসি অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’র উপাচার্য্য অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন- পত্রিকা ছাপার অক্ষরের কাজ নয়, পত্রিকা সমাজের দর্পণ। মানুষের পতিভা বিকাশে পত্রিকা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। কাজি নজরুল ইসলামের প্রতিভা বিকাশে পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই তিনি ধুমকেতু বের করেছিলেন। ধর্মান্ধতার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে ধুমকেতু ছিলো সদা সচেষ্ট। তিনি বলেন, পত্রিকা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখে। এম আর আক্তার মুকুল, রনেশ মিত্র সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা পত্রিকার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাই তারা সমাজের মানুষের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়। পত্রিকা দেশ গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সময়ে বিপদগামী তরুণ ৮ সমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পত্রিকার ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি বলেন, যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে একশ্রেণীর মানুষ ধুলায় লুণ্ঠিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আজো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সংবাদপত্র তাই এগিয়ে যাবে। সিলেট প্রান্ত দ্বিতীয় বর্ষ পেরিয়ে তৃতীয় বর্ষে পদার্পন করায় স্বাগত জানান তিনি এবং পত্রিকার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ২০ এপ্রিল, শনিবার বিকেলে নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত’র প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিডি লিমিটেডের বোর্ড অব ডাইরেক্টর খন্দকর মামুন আলী আখতার’র সভাপতিত্বে নাছির আহমদ খান, কাওছার আহমদ ও ফারজানা ইয়াছমিন ইতি’র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেটের পুলিশ সুপার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা যখন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে ঠিক তখনই এই সময়ে ‘সিলেট প্রান্ত’ দুই বৎসর পার করছে। তা সবার জন্য আনন্দের। তিনি বলেন, সৎ-বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্রের কোন বিকল্প নেই। সংবাদপত্র হলো দ্বিতীয় সংসদ। আমাদের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সিলেট প্রান্ত যেন আরো এগিয়ে যেতে পারে তা কামনা করছি। তিনি বলেন, সিলেট প্রান্ত’র প্রধান সম্পাদক নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকসহ অন্যান্যরা এই পেশায় কমিটেড। কিছু অপসাংবাদিক, কিছু অসাধু সাংবাদিক দ্বারা গোটা সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজ কলুষিত হতে পারেনা। এর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনমত গঠনে ‘সিলেট প্রান্ত’ কার্য্যকর ভূমিকা পালন করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট প্রেসকাব সভাপতি আহমেদ নূর বলেন, একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার দুই বৎসর পার করা এই সময়ের জন্য মারাত্মক কাজ। আমাদের সময় ১০/১৫টা সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিলো। আমরা সাপ্তাহিক পত্রিকা দিয়ে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করি। আজ ওইসব পত্রিকা নেই। কারণ পত্রিকা নিয়মিত বের করা বড় কঠিক কাজ। অনেক দৈনিক পত্রিকা আজ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পাঠকদের মেজাজ বুঝে কাজ করতে হবে। তাহলে সিলেট প্রান্ত সংবাদপত্র জগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক, শুভানুধ্যায়ী,সম্পাদক, সাংবাদিকসহ তার সহকর্মীদের সাফল্য কামনা করেন এবং সিলেট প্রান্ত’র উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিডি লিমিটেডের বোর্ড অব ডাইরেক্টর খন্দকার মামুন আলী আখতার বলেন- সিলেট প্রান্ত’র জন্মলগ্ন থেকে আমরা একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি আর সেটা হচ্ছে আমরা কোন মতাদর্শের, কোন দলের অনুসারী। উত্তরে আমরা বারবার বলেছি আমরা কোন দলের, কোন গোষ্ঠির কিংবা বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নই। আমাদের দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র জনগনের কাছে। আমরা গণমানুষের কথা বলি। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষের, আমরা মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ আর সম্ভ্রম হারানো দু লাখ মা বোনের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা সব সময় দায়বদ্ধ মানুষের মত প্রকাশে অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে।
‘আপনার সাথে একমত না হলেও আপনার মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে আমরা প্রস্তুত’ ভলতেয়ার এই মহান উক্তি আমাদের সম্পাদকীয় নীতি। আমরা গণতন্ত্রকে শুধু আমরা বক্তৃতায়, নির্বাচনে সীমাবদ্ধ মনে করিনা। আমরা গণতন্ত্রকে সমাজের সর্বস্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠার দর্শন হিসেবে মনে করি। আমরা মনে করি গণতন্ত্র হলো নারী, পুরুষ, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে রাষ্ট্রের নিকট সব মানুষ অর্থাৎ সকল নাগরিকের সমঅধিকার। এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দানে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে দায়বদ্ধ।
সিলেট প্রান্ত দ্বিতীয় বর্ষ পেরিয়ে তৃতীয় বর্ষে পদার্পনের সুধী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সিলেট জেলা প্রেস কাবের নির্বাহী সদস্য ও সাপ্তাহিক গ্রাম সুরমা সম্পাদক হাসিনা বেগম চৌধুরী, দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক কাউন্সিলর আজিজুল হক মানিক, লেখক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, মনির উদ্দিন মাস্টার। স্বাগত বক্তব্য দেন- সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত’র বার্তা সম্পাদক ও প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্নেহাংশু ভট্টাচার্য, পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আকলিছ আহমদ চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রবাসী কমিউনিটি নেতা শাহ আলম চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান মিজানুর রহমান, গোলাপগঞ্জ প্রেসকাব সভাপতি আবদুল আহাদ, লেখক কলামিস্ট নুরুল ইসলাম মজুমদার, এড. আবদুল মুকিত অপি, বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব তৈয়বুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন- ডিজিএম এডমিন সেলিম আহমদ চৌধুরী, ইসলামিক টিভি ও বাংলা বাজার পত্রিকার ব্যুরো প্রধান শাহজাহান সেলিম বুলবুল, অনলাইন দৈনিক সিলেটের আলাপ ডট কম, দৈনিক গণকণ্ঠ’র সিনিয়র রিপোর্টার ও জাতীয় সাপ্তাহিক বঙ্গবিচিত্রার সহ সম্পাদক সুনির্মল সেন, সিলেট ব্লাস্টের কো-অর্ডিনেটর শরিফা বেগম, বালাগঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি এফ.এম আলী ফয়েজ, এডভোকেট আবদুল মালিক, ইসমত হানুফা চৌধুরী, শামীম আহমদ, মাসুম আহমদ, রাসেল তালুকদার, মাসিক ভাটির শিকড় সম্পাদক কবি রওশন জলিল কোরেশী, কিরণ দেবনাথ, আয়রুন নেছা রিতা, কাওছার আহমদ, তাহমিদ আহমদ, কয়েস আহমদ সাগর, মাইটিভির সিলেট প্রতিনিধি এম.আর টুনু তালুকদার, ক্যামেরাপার্সন শাহীন আহমদ, জাতীয় পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী জি.এইচ. সুয়েব, সৌখিন আলোকচিত্রী আহমেদ সোহেল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন মাওলানা দেওয়ান মাসউদ রাজা চৌধুরী। এরপর আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত’র প্রধান সম্পাদককে পৃথক পৃথক ভাবে পুষ্প দিয়ে বরণ করেন। তারা হলেন- খন্দকার আকবর আলী তারেক, খন্দকার আমীর আলী তাহের প্রমুখ। এতে সিলেট প্রান্তর পক্ষ থেকে অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সুধী সমাবেশ শেষ হলে পরবর্তীতে একটি মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে জাতীয় ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ সংগীত পরিবেশন করেন।