ড. তাহের হত্যামামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যামামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। তারা হলেন- ড. তাহেরের সহকর্মী ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
বিচারিক আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ রোববার এই রায় দেন।
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের আহমেদকে হত্যার দায়ে আরো দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত।
আব্দুস সালাম ও নাজমুল নামে ওই দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
দণ্ডিত চার আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তাহেরের লাশ পাওয়া যায়।
পড়াশুনার জন্য ঢাকায় থাকা ছেলে-মেয়েদের জন্য উত্তরায় একটি বাসা ছিলো তাহেরের। ঘটনার দিন তার স্ত্রীও সেখানেই ছিলেন।
লাশ উদ্ধারের পরদিন ড. তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী মতিহার থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক আচানুল কবির ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
এতে তাহেরের বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই ও ছাত্রশিবিরের কর্মী আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন ও সালামের আত্মীয় নাজমুলকে অভিযুক্ত করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও আবদুস সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাহের আহমেদকে হত্যা করার কাজে লাগান।
তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
ড. তাহেরকে বাসায় হত্যা করে নর্দমায় লাশ ঢুকিয়ে রাখা হয় বলে পরবর্তীতে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে। বিভাগে পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বলে প্রমাণিত হয়েছে আদালতে।
৩৯ জনের সাক্ষ্য জেরা নিয়ে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মিয়া মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
নিম্ন আদালত সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেয়।
হাই কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. খুরশীদ আলম ও এএসএম নাজমুল হক এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. দেলোয়ার হোসেন সমন্দার ও মাহমুদা বেগম পপি।
মিয়া মহিউদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আনিসুল হক ও এসএম শাহজাহান। জাহাঙ্গীরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
নাজমুল ও আবদুস সালামের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী হিসাবে শুনানি করেন আয়েশা ফ্লোরা ও খবীর উদ্দিন ভূঁইয়া।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নাজমুল হক বলেন, সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এই সব প্রতারণা প্রমাণিত হয়েছিল।
“এটা নিয়ে বিরোধেই তাহের খুন হন বলে মামলার বিবরণে উঠে এসেছে,” বলেন তিনি।
এই খুনের সময় শিবির নেতা সালেহী উপস্থিত ছিলেন বলে জাহাঙ্গীর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিল।
“তবে এরপরও নিম্ন আদালত বিষয়টিকে যথেষ্ট মনে না করে তাকে খালাস দেয়,” বলেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
খালাসের এই আদেশের বিরুদ্ধে তাহেরের পরিবার বা রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টে কোনো আবেদন করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, এই কারণে হাই কোর্টও এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি।