চীনে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৮

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২০৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো প্রায় ১২ হাজার মানুষ।
রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ভূমিকম্পে হতাহতের এ সংখ্যা জানানো হয়েছে।
চীনের স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৮টা দুই মিনিটে সিচুয়ানের ইয়ান শহরের নিকটবর্তী লুসান এলাকায় এই ভূমিকম্প হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, প্রাদেশিক রাজধানী চেংদুর ১১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। এর কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১২ কিলোমিটার গভীরে।
ভূমিকম্পে দূর্গত এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ট্রেন চলাচল, পানি সরবরাহ ও টেলিফোন সংযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং আরো মানুষের মৃত্যু এড়াতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী লি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ।
ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য চীনা সরকার ও জনগণের প্রতি রোববার গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
এক বিবৃতিতে ভূমিকম্প দূর্গতদের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো আন্তর্জাতিক সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মুন।
উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য আঠারো হাজার সেনা দুর্গত এলাকায় গেছে বলে সিনহুয়া জানিয়েছে।
নিহতদের বেশিরভাগই লুসান এলাকার, ইয়ান থেকে দূরত্ব অল্প হলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি এই এলাকার সরু রাস্তাগুলো ভূমিধসে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যহত হচ্ছে। তবে প্রায় ১০ হাজার সেনা এসব প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে যেয়ে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে আহতদের উপচে পড়া ভিড়, হাসপাতালের বাইরে তাবু টাঙিয়ে অনেককে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কেভিন সিয়া বলেছেন, “লুসানের কেন্দ্রিয় এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে, কিন্তু আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় উপকরণের সঙ্কট রয়ে গেছে।”
“রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকার কারণে রসদ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। আমাদের বেশিরভাগ রসদ রাস্তায়ই আটকে আছে,” বলেন তিনি।
চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি ১শ’ ৮৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে এবং অপর ২২ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে। আহতের মোট সংখ্যা ১১ হাজার ৮শ’ জন যাদের মধ্যে এক হাজার জনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছে।
ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইয়ান শহরের ভূমিকম্প ত্রাণ দপ্তরের উপপরিচালক চেন ইয়ঙ।
এবারের ভূমিকম্পে কোনো স্কুল ভবন ধসে পড়েনি বলে জানান ইয়ঙ। ২০০৮ সালের ভূমিকম্পে স্কুল ধসে পড়ার ঘটনা জনমনে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল।
“আমাদের স্কুলগুলো সবচেয়ে নিরাপদ ও দৃঢ় ভবন। স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করতে চীনা সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করেছে। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কোনো স্কুল ধসে পড়েনি,” বলেন তিনি।
১৫ লাখ ৩০ হাজার বাসিন্দার ইয়ান শহরটি প্রাদেশিক রাজধানী চেংদু থেকে ১শ’ ৪০ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি জায়ান্ট পান্ডার বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। এই এলাকা থেকেই চা চাষের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
চেংদুসহ আশপাশের প্রদেশগুলোতেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসে।
ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি পরাঘাত হয়। সবচেয়ে বড় পরাঘাতটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১।
প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা, পরে তারা এর মাত্রা ৬ দশমিক ৬ বলে জানায়।
এর আগে ২০০৮ সালে কাছাকাছি এলাকায় ৭ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়।