দুই নেত্রীকে একত্র করবেন হামিদ, আশা এরশাদের

ডেস্ক রিপোর্ট : নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে এইচ এম এরশাদের প্রত্যাশা, তিনি রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসানে দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীকে আলোচনায় বসাতে সক্ষম হবে।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের নির্বাচনে আপত্তি না থাকলেও মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করায় খেদও প্রকাশ করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সোমবার নির্বাচিত হয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ। আগামী বুধবার তার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে।
দলের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আবদুল হামিদকে অভিনন্দন জানিয়ে এরশাদ বলেন, সংসদের স্পিকার হিসেবে তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, আশা করি রাষ্ট্রপতি হিসেবেও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন।
“নতুন রাষ্ট্রপতি জাতির এই ‘ক্রান্তিকাল’ উত্তরণে দুই নেত্রীকে একত্রে আলোচনায় বসাতে সমর্থ হবেন বলেও আমি আশা করি।”
একসঙ্গে আলোচনায় বসতে দুই নেত্রীকে এই মাসের শুরুতে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। তবে তাতে এখন পর্যন্ত কারো সাড়া দেখা যায়নি।
এরশাদ বলেন, “দুই নেত্রীকে একসাথে বসানোর চেষ্টা করছি। আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য একসময় তারা একত্রিত হয়েছিলেন। এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আবার তাদের সমঝোতার সময় এসেছে।”
আবদুল হামিদকে স্বাগত জানালেও তাকে মনোয়য়নের বিষয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোটের সবচেয়ে বড় শরিক আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি বলে জানান এরশাদ।
“রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করলেন, আমাকে একবার জিজ্ঞাসাও করলেন না। আমারও তো একটা মতামত থাকতে পারে। এভাবে আমাকে উপেক্ষা করলেন!”
মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের হরতালেরও সমালোচনা করেন।
“হরতালে সরকারের পতন হয় না, বরং জনদুর্ভোগ হয়। ব্যাবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
“আমার সময়ে ৩৭৪ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। এই হরতালগুলো না দিলে বাংলাদেশকে আমি মালয়শিয়ার মতো বানাতে পারতাম,” বলেন সাবেক এই সামরিক শাসক।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, “আপনারা(বিএনপি) ১৯৯৫ সালে আমাকে আসামি করে জিয়া হত্যা মামলা করেছিলেন। আপনাদের টার্গেট ছিলো আমার পথ রুদ্ধ করে আমাকে পকেটে পোরা। কিন্তু এরশাদ পকেটে থাকার মানুষ না।”
আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান বলেন, “জাতীয় পাটি নির্বাচনমুখী দল। আমাদের প্রথম ও শেষ কথা নির্বাচন। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে তার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
‘উপযুক্ত’ পরিবেশ না হলে জাতীয় পাটি নির্বাচনে যাবে না বলেও জানান তিনি; যার দল আগামী নির্বাচন এককভাবে লড়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
গণজাগরণবিরোধী হেফাজতে ইসলামের বিষয়ে এরশাদ বলেন, “জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। কেউ যদি বলে থাকেন, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক আছে, তাহলে সেটা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়।”
গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের পানি খাওয়ানোয় জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন সভায় মহাজোট নেতাদের সমালোচনার মুখে থাকা এরশাদ আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, “তারা প্রতিবাদ করতে এসেছিলেন। রাসুল (সা.) এর বিরুদ্ধে কটূক্তির প্রতিবাদ করার জন্য তারা ঢাকায় এসেছিলেন। আমি তাদের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিলাম, তাদের বোঝাতে চেয়েছিলাম।”
“হেফাজতে ইসলাম একটি থ্রেট। এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অবশ্যই আপনাদের কথা বলতে হবে,” বলেন তিনি।
রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির প্রতিষ্ঠাবাষিকীর ওই অনুষ্ঠানে এরশাদ আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পাটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আবু হোসেন বাবলা, মাহমুদ হাসান, আব্দুস সবুর, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ জব্বার প্রমুখ।