আর কত স্বজন হারানোর ব্যাথায় বাকরুদ্ধ হবো আমরা !

গত ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটে গেলো দেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ভবন ধস। নয় তলাবিশিষ্ট এই রানা প্লাজার ভবনের ধবংস স্তুপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক তাঁজা প্রাণ। বাতাসে এখন যেন শুধু লাশের গন্ধ! আর বিনিময়ে তৈরি হলো এক নতুন মৃত্যু উপত্যকা। রড আর ইট-সিমেন্টের বড় বড় স্তুপের চাপায় পিষ্ট জীবনের তাঁজা স্বপ্নগুলো যেন, নিমেষেই সবার সামনেই হারিয়ে গেলো ও যাচ্ছে, কিন্তু ঐ শোষক শ্রেনীরা আজীবন যেন মানুষকে শোষনই করে যাচ্ছে! যেখানে ভবনটিতে একদিন আগেও ফাটল দেখা দেয়ায় বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা, ভবন মালিকের সঙ্গে বসে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু বিল্ডিং এর ফাটল দেখা সত্বেও এই ট্র্যাজেডির নায়ক ভবন মালিক সোহেল রানা ও মালিকপড়্গের কর্মকর্তারা কাজ তো বন্ধ করেনই নি, বরং শ্রমিকদের বেতনের ভয় দেখিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কাজে ঢুকতে বাধ্য করেছেন। দুর্ঘটনার আশংঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপড়্গ কোন পদড়্গেপ নেয় নি। উদাসিনতা নিয়ে দিন-রাত করিয়ে আসছিল। তাদের দাবি যদি প্রমাণিত হয়ে থাকে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্বজন হারানোর ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে চোখের পানি শুকিয়ে নির্বাক তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা? বিবর্ণ চেহাড়ার এই মানুষগুলো কি এই বাংলাদেশের নাগরিক না? তাহলে গার্মেন্টস খাতে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটার পরও সামাজিক, মানবাধিকার সংগঠনগুলো এদের অধিকার হননের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যখন একটি দুর্ঘটনা ঘটে, এর কিছুদিন গণমাধ্যম জুড়ে তার খবর থাকে, কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, তদন্ত কমিটি গঠিত হয় । দুদিন পর আবার যা তাই! এভাবে আর কত দিন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, যেখানে বড় ধরনের কোন ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত যেন কারোরই কোন টনক নড়তে চায় না। এবার যে করেই হোক, এ লাশের খেলা বন্ধ করা করতে হবে। আর এই ভবনের মালিকগুলোও যেন মানুষ খেকো, এদের মানবিকতা বলে কিছু নেই, দুর্ঘটনা ঘটার পর এরা যেন এক নতুন অভিনয় শুরু করে। এদের কোন ক্ষমা নেই।
উদ্ধার কাজে ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনী, রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ, র্যাব সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। অনেকেই এগিয়ে আসছেন স্বজনদের রক্ত দেয়ার জন্য। এনাম মেডিকেল কলেজ অসুস্থ ও মুমূর্ষ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা চালিয়ৈ যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতেও সবাই রক্তদানের আহ্বানকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সবশেষে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই, ঐ সব খেটে-খাওয়া অসহায় সাধারণ গার্মেন্টস কর্মী মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত কল্পে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি, দেশের বিত্তবান ও সহৃদয়বানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন এই অসহায়, হতভাগা এই স্বজনদের জন্য আমাদের যার যার সাধ্যমতো আমাদের সহযোগিতার হাতটুকু বাড়িয়ে দেই।
লেখকখ : সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী, ভালুকা, ময়মনসিংহ