লাশের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট : সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। এদের মধ্যে ২৮৫টি লাশ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন কর্মকর্তারা। তবে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য সাভার অধরচন্দ্র মাঠ ও এনাম ক্লিনিকে হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১২টি লাশ।
বৃহস্পতিবার রাতেও স্বজন হারানোদের কান্নার মাঝে উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী সদস্যরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যান। রাতের অন্ধকারে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে সাভারের ‘রানা প্লাজা’র ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়াদের উদ্ধার কিছুটা ধীরগতিতে চলেছে।
সাভার থানার এএসপি মশিউদ্দৌলা জানান, শুক্রবার সারাদিন জীবিতদের উদ্ধার জন্য অভিযান চলবে। তাই শুক্রবারের পর থেকে কেবল লাশ উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। এখনো ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন কাজ করছেন।
এদিকে হাসপাতাল ও অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে মাঠে দেখা গেছে, মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় সনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মৃতরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় আটকেপড়াদের বাঁচাতে এবং উদ্ধার কাজ আরো ত্বরান্নিত করতে জরুরি ভিত্তিতে অঙিজেন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা।
৫০ ঘণ্টা পার হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়াদের বেঁচে থাকার সম্ভাবণা ক্রমেই ক্ষীন হয়ে আসছে। আটকা পড়াদের মধ্যে যারা জীবিত রয়েছেন তাদের বিষয়টিও আশঙ্কাজনক।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়াদের সংখ্যা সরকারী হিসেবে এক হাজারের মতো হলেও প্রকৃত সংখ্যা এর দিগুন বলে ধসে পড়া ভবন থেকে প্রাণ নিয়ে বেঁচে আসাদের অভিমত।
ধ্বংসস্তূপে মধ্যে যেসব কর্মীরা বেরিয়ে আসছেন তারা জানিয়েছেন, ভেতরে বেঁচে থাকাদের আর্তনাদ এতোই বেশি যে নিজেদেরকে সামলে রাখা যাচ্ছে না। তাদের সাধ্যর মধ্যে নিজের জীবন বাজি রেখে যতোটা সম্ভব ভিতরে প্রবেশ করে জীবিত ও মৃতদের বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে তাদেরকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছেও বলে জানান তারা।
সময় যতো গড়াচ্ছে ততোই বাতাসে লাশে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। স্বজন হারানোদের কান্না আর লাশের গন্ধে সাভারের রানা প্লাজা এলাকায় দায়িত্ব পালনরত সকলের মন যেন ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠছে।
বুকে শোক নিয়ে যে যেভাবে পারছে উদ্ধার কাজসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
উদ্ধারকৃত লাশগুলোকে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাখা হচ্ছে। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করছে উদ্ধারকারী বাহিনীগুলোর যৌথ টিম। হস্তান্তরের সময় ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া ও দাফনের খরচের জন্য।
আহতদের ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা খরচের জন্য। সরকারি অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতার ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে প্রত্যেক মৃত ও জীবিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যেসব মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি সেসব মৃতদেহ দ্রুত পচন ধরায় ঢাকা মেডিকেল মর্গে মরচুরায়ি রাখার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে সেখান থেকে পরিচয় পেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আটকে পড়াদের মধ্যে অনেকেই জীবিত রয়েছে বলে উদ্ধারকাজে লিপ্ত সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন কাউকে উদ্ধার করা হলে তাদের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আঘাতের ধরন অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আহতের ধরন দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এসব রোগী স্থানান্তর করা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্রস্তুুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে ভবন ধসের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং রাজউক আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিজিএমইএকে বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। সেখানকার পাঁচ পোশাক কারখানার সদস্যপদ স্থগিত করেছে বিজিএমইএ।
দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশ, রাজউকসহ অন্যরা মামলা করেছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিকের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ভবন মালিক ও গার্মেন্টেসের মালিকদের গ্রেফতার করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির করতে বলেছেন।
উল্লেখ্য, আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে পুরো ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভবন মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা এ ফাটলকে প্লাস্টার খসে পড়া বলে চালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বুধবার নিউওয়েব বটমস লি: চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির ১ ও ২ তলায় মার্কেট, ৩ তলার সামনে অংশে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা এবং ৩ থেকে ৮ তলা পর্যন্ত মোট ৫টি গার্মেন্টস কারখানা ছিল। এ কারখানাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো।