করুণ আর্তনাদ ও বিভীষিকাময় দৃশ্য : মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব !

সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে গেলো ভয়াবহতম একটি নয় তলাবিশিষ্ট ভবন ধসের ঘটনা। আর এ কারণে বাংলাদেশী সকল টিভি চ্যানেলের খবর জুড়েই শুধু আহত মানুষের চিৎকার, স্বজনের আহাজারি আর চাপা পড়ে থাকা মানুষের বাঁচার জন্য করুণ আর্তনাদ পাশাপাশি দুর্ঘটনাকবলিত ভবনের দুর্গন্ধময় পরিবেশের বিবরণ। সাভারের ভয়াবহতম এ ভবন ধসের ঘটনায় এক্সক্লুসিভ দৃশ্যগুলো দেখাতে গিয়ে সাংবাদিকদেরকেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নিতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। মুহূর্তের মাঝেই বাংলাদেশের সকল প্রানেত্মর মানুষ জেনে যাচ্ছে সকল আপডেট। এ সব কিছুই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উৎকর্ষতার বদান্যতা। এছাড়া বর্তমান যুগ অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। ইলেকট্রনিক মিডিয়া জানার আকাঙ্খাকে মানুষের ভেতরে আরো বেশি করে জাগিয়ে তুলেছে। বর্তমান তারুণ্য নির্ভর ইলেকট্রনিক সাংবাদিকরা যেকোন দুর্ঘটনা বা সংবাদ পাওয়া মাত্র যেভাবে তার আদ্যোপানত্ম সকলের সামনে তুলে ধরছে, তাতে সাধারণ মানুষ হিসেবে ঘটনাস্থলে না থেকেও সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় এই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারণে। রানা প্লাজার ভবন ধসে আহত, নিহত, বর্তমানে রড়-ইট-সিমেন্টের বড় বড় স্তুপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের সংবাদ পরিবেশনে যে এক্সক্লুসিভ বা সরাসরি বা লাইভ সম্প্রচার করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাতে এক্সক্লুসিভ শটের ধারণকৃত দৃশ্যগুলো সকল বয়সের জন্য কতটুকু উপযোগী, তা কি আমাদের টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষগুলো একবার ভেবে দেখেছেন? বিবর্ণ ও বিকৃত চেহারা আর খন্ডিত দেহের চিত্রগুলো একদিক থেকে মানবিকতার চরম আবেদনকে হয়ত পৌঁছে দিচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। অন্য দিকে বিভীষিকাময়। কিন্তু এই বিকৃত খন্ডিত দেহের ছবি ও শব্দগুলো একজন মানুষের সুস্থ্য মনোজগতে কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা কি আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা একবারও ভেবে দেখেছেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যে চ্যানেল যত বেশি মর্মস্পর্শী মানবিক আবেদন ও তথ্য নির্ভর সংবাদ পরিবেশন করতে পারছে, সেই চ্যানেলের তত বেশি দর্শক জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু এই দর্শক জনপ্রিয়তা পাবার পেছনে কাজ করছে এক অসুস্থ্য বাণিজ্যিক প্রতিযোগীতা। ধারণ করা কোন চিত্র সম্প্রচার করা যাবে, আর কোন চিত্র সম্প্রচার করা যাবে না, সে দিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। মনে হয়, যা পাওয়া গেলো, সেটাই কে কার আগে সম্প্রচার করতে পারবে, সেই চ্যানেলই হিট হবে এবং সেই এক্সক্লুসিভ দৃশ্যটি প্রচার করাই মূখ্য বিষয়। কিন্তু এই মর্মস্পর্শী আবেদন আর বিকৃত ও গলিত বা খন্ডিত বা চাপা পড়ে থাকা ব্যাক্তির আকুল আর্তনাদের দৃশ্যের কোন নেতিবাচক দিক আছে কিনা, সে বিষয়ে ভাবার দরকার নয় কি? আমি মনে করি প্রচারিত দৃশ্যগুলো সকল বয়সের জন্য দেখার উপযোগী নয়, এমন কি প্রচারিত এই দৃশ্যগুলো মানুষের মনোজগতে এক বিরাট নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ হয়ত জানার আগ্রহে দেখে, কিন্তু এর হৃদয় বিদারক দৃশ্য তাকে এক অন্যরকম ভাবনার মধ্যে ফেলে দেয়, যা থেকে কেউ স্থায়ী মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মানুষেও পরিণত হতে পারে। তাই মিডিয়া সংশিস্নষ্ট সকলের কাছে আবেদন, আপনার জাতির বিবেক, তাই আপনাদের একটু অবিবেচনা হয়ত এই দেশের মানুষের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
(লেখক: সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী, ভালুকা, ময়মনসিংহ)