বিশাল ধ্বংসস্তূপের তিনদিক থেকে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবানিহীর নেতৃত্বে সরকারি-বেসরাকারি উদ্ধারকর্মীরা। কৃত্রিম আলো ফেলে পচে যাওয়া লাশের প্রচন্ড উৎকট গন্ধের মাঝে শুধুমাত্র মানবতার কারণে সবাই কাজ করছেন বিরামহীন ভাবে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর পরিসংখ্যার অনুযায়ী, শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে সর্বমোট ৩৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৩২৭ টি লাশ। এবং দুই হাজার ৩৮০’র বেশি ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আইএসপিআর সূত্র জানায়, শুক্রবার ১২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে জীবিত ৯৪ জনের এবং ২৪ জনের মৃতদেহ।
উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. তামিম জাস্ট নিউজকে জানান, আমি নিজে ভবনের নিচ তলায় আন্ডারগ্রাউন্ডের মধ্য মসজিদ রয়েছে সেখান থেকে দুউজন মহিলাকে জীবিত উদ্ধার করেছি। সেখানে মৃত মানুষের পঁচা গন্ধ এতোটাই বেশি বমি আসছে আমাদের। তারপরও নিজের মানবতার তাগিদে জীবন বাজি রেখে ভিতরে গিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করছি। আমার মতো স্বেচ্ছায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছি। সরকারি বাহিনীগুলো যদি আমাদের মতো ভিতরে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাতো তবে জীবিত অবস্থায় আরো অনেক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
রাতের অন্ধকারে কৃত্রিম আলোর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া শত শত জীবিত ও মৃত মানুষদের উদ্ধার কাজ চলছে। রানা প্লাজার অশেপাশে হাজার হাজার মানুষের ভিড় কোনো ভাবেই কমানো যাচ্ছেনা। স্বজন হারানো নারী-পুরুষ ছবি নিয়ে অপেক্ষা করছে জীবিত ও মৃত সন্ধান পাওয়ার আশায়।
বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে স্বজনের লাশের সন্ধান পেতে রানা প্লাজার সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। ভিড় সামাল দিতে হীমশিম খাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বানিহী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। কান্নার শব্দে সাভারের আকাশ যে ভারি হয়েছে, তার আর শেষ হচ্ছে না।
শামিম নামের উদ্ধারকর্মী জাস্ট নিউজকে জানান, সরকারি উদ্ধারকর্মীরা যদি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করা উদ্ধারকর্মীদের মতো তৎপরতা চালাতো তবে আরো বহু মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো। কেননা ভবনের একেবারে ভিতরে যেতে চান না নিজের জীবনের ভয়ে। তবে আমরা যারা মানুষ মানুষের জন্য এই কথায় বিশ্বাসী হয়ে দূরদূরান্ত থেকে এসেছি তারা সব কিছুকে জয় করে ভিতরে ঢুকছি। জীবিত ও মৃতদের উদ্ধার করে আনছি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে পুরো ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। কিন্তুু ভবন মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা এ ফাটলকে প্লাস্টার খসে পড়া বলে চালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বুধবার নিউওয়েব বটমস লি: চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির ১ ও ২ তলায় মার্কেট, ৩ তলার সামনে অংশে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা এবং ৩ থেকে ৮ তলা পর্যন্ত মোট ৫টি গার্মেন্টস কারখানা ছিল। এ কারখানাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো।