৪ শিশুর জীবন হুমকিতে: কুলাউড়ায় ভূয়া ডাক্তার আটক

কুলাউড়া প্রতিনিধি : কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে অনুমোদনহীন এক ডাক্তারের ভুল শল্যচিকিৎসায় ৪ শিশু এখন যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। তাদেরকে মৌলভীবাজারস্থ বদরুন্নেছা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ২০ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটেছে। ভূয়া এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক কামাল হাসান ২৫ এপ্রিল জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে শিশু আহলান ও সাহলান এর পিতা জামাল হাসান বাদী হয়ে গত ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ডা. এম এ ইসলাম (মোঃ আহাদুল ইসলাম) ও খান ফার্মেসীর মালিক আজিজ খানকে বিবাদী করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঐদিন সন্ধ্যায় কথিত এই ডা. এম এ ইসলামকে কুলাউড়া দক্ষিণবাজারের মুক্তাদির ফার্মেসী থেকে গ্রেফতার করে। লিখিত অভিযোগ ও মামলার আরজি থেকে জানা যায়, কামাল হাসানের ভাতিজা আহলান হাসান (৮) ও সাহলান হাসান (৫) এবং ভাগ্নে সাফওয়ান হাসান (৫), আরিয়ান হাসানের (৪) খৎনা দেয়ার জন্য বরমচালস্থ ফুলেরতল বাজারে খান ফার্মেসীতে যোগাযোগ করেন। খান ফার্মেসীর মালিক আজিজ খান তাদের ফার্মেসীতে অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে ডা. এম এ ইসলাম সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বসে প্র্যাকটিস করার কথা জানান এবং তিনি নিজে উল্লেখিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে (নং ০১৭১৫-১৪০১২৪) কামাল হাসানকে যোগাযোগ করতে বলেন। ঐ দিন কামাল হাসান ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে এমবিবিএস-এ ডিগ্রীধারী ও সার্জারিতে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বলে নিশ্চয়তা দেন। গত ২০ এপ্রিল বেলা ৩টায় খান ফার্মেসীর আজিজ খানকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা সময়ের মধ্যে উল্লেখিত চারটি শিশুর খৎনা সম্পন্ন করেন এবং চারটি ব্যবস্থাপত্র দেন। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয় খৎনা সম্পন্ন করার আগে প্রতিটি শিশুকে তিনি তিনটি করে ট্যাবলেট খাওয়ান। এ সময় ট্যাবলেটগুলোর নাম জানতে চাইলে উক্ত ডাক্তার জানাতে চাননি। খৎনার পর থেকে প্রতিটি শিশু প্রচন্ড জ্বালা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। এক পর্যায়ে আরিয়ান হাসানের প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ডাঃ এম এ ইসলাম কে বিষয়টি অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পর খান ফার্মেসীর মালিক আজিজ খান বাড়িতে গিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে বলে আরিয়ান হাসানকে ক্যাপসুল খাইয়ে দেন। রাত সাড়ে ৮টায় ডাঃ এম এ ইসলাম আরিয়ান হাসানের খৎনা স্থানে দীর্ঘক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রেখে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার চেষ্টা করেন এবং তার খৎনা স্থানে সেলাই দিতে উদ্যত হন। এতে পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন এবং তার ডিগ্রী সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি তার ডিগ্রী সম্পর্কে পরে জানাবেন বলে আশ্বস্থ করেন। এছাড়া ডাঃ এম এ ইসলাম তার ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে এমবিবিএসএ, এমপিএইচ (কোর্স), এমডি (অল্টারনেটিভ মেডিসিন), মেম্বার কেবিএএম, বিএএমএ, এক্স-মেডিকেল অফিসার (প্রাঃ) গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা ঢাকা বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে আরিয়ানের রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ব্রাহ্মণবাজার মুসলিম এইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিলে আরিয়ান হাসানকে মৌলভীবাজার বদরুন্নেছা (প্রাঃ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সেলাই দেন। এদিকে সাহলান হাসান ও সাফওয়ান হাসানের রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাদেরকে পরদিন সকাল ৭টায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার সার্জারি বিভাগের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। বর্তমানে তাদের অবস্থা নিয়ে পরিবারের লোকজন শংকিত রয়েছেন। উল্লেখ্য, কথিত উক্ত ডাক্তার কুলাউড়া দক্ষিণবাজারস্থ মুক্তাদির ফার্মেসী, বরমচাল ফুলেরতল বাজারস্থ খান ফার্মেসী ভূকশিমইল ও ভাটেরা ইউনিয়নের কয়েকটি ফার্মেসীতে বসে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। কথিত এই ডাক্তারের বাড়ী খুলনা জেলার বটিগাটা থানায় বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।