কমলগঞ্জে বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালে ফাঁটল ক্লাস না করেই ফিরেছে শিক্ষার্থীরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষের দেয়ালে অসংখ্য স্থানে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ক্লাস না করেই আতংকিত ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে ফিরে গেছে। দীর্ঘ দিন ধরে টিনশেডের পাকা দেয়ালযুক্ত বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উচ্চ পর্যায়ের কয়েক দফা পরিদর্শন হলেও আজও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের শিশু ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসার পর শ্রেণীকক্ষের দেয়ালের ফাঁটল দেখে আতংকে অভিভাবকরা ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৯৩৬ সনে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে উপরে টিনশেড ও চারদিকে পাকা দেয়ালে ভবন নির্মিত হয়। বর্তমানে শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভবন বলে উপরের টিনের চালা অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বারান্দাসহ শ্রেণীকক্ষে বৃষ্টির পানি পড়ে। প্রায় ৬ বছর ধরে একে একে এ ভবনটির অফিসসহ ৬টি কক্ষের ৪টির পাকা দেয়ালে অসংখ্য স্থানে বড় ধরণের ফাঁটল সৃষ্টি হয়। ফলে ভয় হয় ভূমিকম্প, বড় ধরণের ঝড় বা টর্নেডো হলে এ পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি ও সাবেক জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। অচিরেই এ ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেড ভবন ভেঙ্গে সেখানে একটি নতুন দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর প্রকৌশলীকে নির্দেশও দিয়েছিলেন বলে প্রধান শিক্ষক জানালেন। তারপরও শমশেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক মুর্শেদ আহমদ ও রোকশানা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে আতংকে থাকতে হয় কখন দুর্ঘটনা ঘটে এই ভেবে। সমপ্রতি সাভারের পাকা বহুতল ভবন ধ্বসের চিত্র দেখে তারা এখন রীতিমত আতংকিত বলেই বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের ক্লাস না করিয়ে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়েছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিশলয় চক্রবর্তী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনও’র সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে নিয়ে সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসন এদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। সুতরাং আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।
অপরদিকে মৌলভীবাজারের শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের দু’তলার দুইটি কড়্গের দেয়ালের ১০টি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ওই দুইটি কক্ষে ক্লাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে জেলা শিড়্গা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯টি ক্লাসরুমে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ১২০০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। সম্প্রতি ভূমিকম্পের সময় স্কুলের পূর্বদিকের পুরনো দ্বিতল ভবনের দুইটি কক্ষে ফাটল দেখা দেয়। ফাটল দেওয়া ভবনটি ৮০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয় কোন প্ল্যান ছাড়াই। এই দুইটি কক্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৪টি শাখার ক্লাস চলতো। স্কুল কর্তৃপক্ষ ফাটলের বিষয়টি প্রথমে আমলে নেয়নি। পরে সপ্তাহ খানেক আগে কয়েকটি স্থানে আরও ফাটল দেখা দিলে তারা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই স্কুলের আরও ৫টি ভবন পরিত্যক্ত রয়েছে। বর্তমানে এগুলো স্টোর রুমসহ অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু স্কুলের ষান্মাষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন ঝুঁকি নিয়ে এসব কক্ষেও ক্লাস নেওয়া হয়ে থাকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন খান জানান, ফাটলের কারণে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ওই দুইটি কক্ষে ক্লাস নেওয়া বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদেরকে অন্যত্র ক্লাস করানো হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সদস্য আব্দুল আজিজ জানান, তারা এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছেন। এখন তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবু শাহজাহান জানান, ফাটলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ক্লাস নেওয়া বন্ধ রাখার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেছি।
মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, ফাটলের বিষয়টি আমাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়নি। তবে আজ সোমবার তিনি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।